Image: of 39     Loading Rotate Image
 
Keyboard controls
 
Help     Bold Text
 
Resize Text
 
  Toolbar

Manuscript & Transcription: RBVBMS_231


Bichitra: Online Tagore Variorum :: School of Cultural Texts and Records

tagore_manuscript
 

**১

*ইংরাজিতে লেখা রুটিন

**২

*সংস্কৃতে লেখা

**৩

<«+++» আর, «+++» চিন্তার জ্বালায়
«+++» সহিতে আর সংসারের +++
«+++»বার ঘুমাইতে +++ মোর
«+++» হৃদয় মাঝে ঢাকি বিরামের জল+++>

*ভগ্নহৃদয়, ঊনত্রিংশ সর্গ / নূতন ঊষা

«সং»সারের পথে পথে, # মরীচিকা অন্বেষিয়া,
ভ্রমিয়া হয়েছি ক্লান্ত নিদারুণ কোলাহলে,
«+++» বলি একবার, # <ঘুমাইতে দাও মোরে,> {আমারে ঘুমাতে দাও,}
শীতল করি এ হৃদি স্নিগ্ধ বিরামের জলে<,>{।}
শ্রান্ত এ জীবনে মোর, # আসুক্ নিশীথ কাল,
বিস্মৃতি আঁধারে ডুবি ভূলি সব দুখ জ্বালা,
নিঃস্বপ্ন নিদ্রার কোলে, # ঘুমাতে গিয়াছে সাধ,
<চলিতে> {মিশাতে} সমুদ্র মাঝে জীবনের স্রোত মালা!
সর্ব্বব্যাপী অন্ধকারে, # মিশিয়া যাইবে ক্রমে,
<+++> পৃথিবীর যত কিছু সুখ দুখ ভালবাসা
দারুণ শ্রান্তির পরে, # সে <+++> {অতি} সুখের ঘুম
সেই ঘুম ঘুমাইব <নাই> আর কিছু নাই আশা!
ক্রমে ক্রমে ধীরে ধীরে, # ভাঙ্গিবে সে ঘুম ঘোর,
নূতন প্রেমের রাজ্যে পুন আঁখি {যবে} মেলিব!
সে যে কি সুখের উষা # হাসিবে নূতন লোকে
সেই নব সূর্য্যালোকে মনো সুখে খেলিব!
রজনী পোহালে পরে, # বিহঙ্গ <কেমন সুখে> {খেলায় সুখে}
<খেলায় +++> মেঘে মেঘে সুখ গান গাহিয়া
তাপিত কুসুম যথা, # বিতরে সুরভি শ্বাস,
«+++»ল শিশির জলে নাহিয়া!
«+++»তি জলে, # অবগাহি মন খানি
«+++»বীর সব ধুয়ে ফেলিব!
«+++» লোয়ে, # নূতন নূতন লোকে
«+++»তন নূতন সুখে খেলিব।

**৪

*?

«+++» এক বৎসরের মধ্যে যে সর্ব্বাপেক্ষা, «+++»নিবারক, «+++» ও অল্পব্যায়সাধ্য <উপায়> {প্রণালী} উদ্ভাবন <করিয়া> করিবে তাহারাই «+++»ত বর্ষীয় সভ্যপ্রহাস+++কল্প ক্রমে ক্রমে য়ুরোপে রাষ্ট্র হইতে «+++» <+++> প্রতি ঘৃণা— {১৮৭৩ খৃঃ অঃ} ইউনাইটেড <ষ্টেটে +++> ষ্টেট্‌সের মিলিত «+++» কজন নিগ্রো ভর্ত্তি হয়, <তাহার> বিদ্যা উপার্জ্জনে সকলের সমান অধিকার «+++»হার সহপাঠীগণ, তাহাতে কোন আপত্তি করিতে পারে না, কিন্তু তাহাদের অপেক্ষা «+++» জাতীর সহিত কথোপকথন করিতে সকলেই অস্বীকার করিল। {যতদিন আর একজন নিগ্রো না তার +++} দরিদ্র বো«+++»কাকী হইয়া পড়িল। পঁচাত্তর জন ছাত্র, {যাহারা} সকলেই, সাধারণ তন্ত্র রাজ্যে বাস ক«+++»+++ «+++»হারা সমানতা সমানতা করিয়া {দিন রাত্রি} মহা গোলযোগ করে, তাহাদের মধ্যে কেহ «এই» নিগ্রোর সহিত মিশিতে সাহস করে নাই, কিন্তু এই নিগ্রো বিদ্যা শিক্ষার জন্য «+++»রি বৎসর <ধরিয়া> সম্পূর্ণ রূপে একঘোরে হইয়া কাটাইয়াছিল। আমরা দেখিতেছি «+++» <রাজি রক্তের তেজ এখনো য়ুনাইটেড ষ্টেটস্ বাসীদিগের সম্পূর্ণ রূপে আছে।> ইংরাজি «+++»তীয় চরিত্র এখনো ইউনাইটেড ষ্টেটস্ বাসীরা সম্পূর্ণ রূপে ভোগ দখল করিতে «+++»ছনা।

**৪

*কবিতা
*হিমালয়

সে ঘুম ভাঙ্গিবে যবে, # নূতন জীবন লোয়ে
নূতন নূতন রাজ্যে <বেড়াইব +++ খেলিয়া> {নানা সুখে খেলিব,}
যত কিছু পৃথিবীর, # <সুখ দুখ, ধুয়ে ফেলে> {দুখ, জ্বালা, কোলাহল,}
ডুবায়ে বিস্মৃতি জলে মুছে সব ফেলিব
ওই যে অসংখ্য তারা, # ব্যাপিয়া অনন্ত শূণ্য
নীরবে পৃথিবী পানে রহিয়াছে চাহিয়া
ওই জগতের মাঝে, # <একদিন দাঁড়াইয়া> {দাঁড়াইব একদিন,}
হৃদয় বিস্ময়-গান উঠিবেক গাহিয়া—
রবি শশী গ্রহ তারা, # ধূমকেতু শত শত,
আঁধার আকাশ <+++> {ঘেরি} চারিদিকে ছুটিছে,
<শুনিব> বিস্ময়ে <ভয়ে> {শুনিব ধীরে—} # বিশাল এ <প্র> প্রকৃতির
অভ্যন্তর হোতে এক গীত ধ্বনি উঠিছে!
অনন্ত গম্ভীর ভাবে, # বিস্ফারিত হবে মন,
হৃদয়ের ক্ষুদ্র ভাব যাবে সব ছিঁড়িয়া?
তখন অনন্ত কাল, # অনন্ত জগত মাঝে
অনন্ত গম্ভীর সুখে রহিব গো ডুবিয়া!

**৫

*?

«+++»বল ক্ষয় এবং বিরূপাক্ষ বধ«+++» রাবণ দ্বি«+++» জ্বলিয়া উঠিলেন।
অতঃপর <রাক্ষসাধিপতি মহাত্মা> হনু«+++»কর্ত্তৃক কুমার +++ রাক্ষসাধিপতি মনঃসমাধান পূর্ব্বক শোক {সম্প«+++»} করিয়া ইন্দ্রজিতকে রণে যাত্রা করিতে আদেশ করিলেন।

**৫

*রাজনারায়ণ বসুকে লেখা চিঠি

**৬

*মালতী পুঁথি
*ছেলেবেলাকার আহা, ঘুমঘোরে দেখেছিনু

«+++»লো না সখি«+++»
«+++»লতে যা হবে «+++» ভূলিব!
«+++» হৃদয়ের বি«+++»ছ
পড়েছে কল«+++» ভুলিব!
ছেলেবেলাকার আহা, ঘুম«+++»রে দেখেছিনু
মূরতি দেবতা সম অপরূপ স্বজনি,
ভেবেছিনু মনে মনে, প্রণয়ের চন্দ্র লোকে
খেলিব দুজনে মিলি দিবস ও রজনি,
আজ সখি একেবারে, ভেঙ্গেছে সে ঘুমঘোর
ভেঙ্গেছে সাধের ভূল <জড়িত> {মাখানো} যা মরমে,
দেবতা ভাবিনু যারে, তার কলঙ্কের কথা
শুনিয়া মলিন মুখ ঢাকিয়াছি শরমে।
তাই ভাবিয়াছি সখি, এই হৃদয়ের পটে
এঁকেছি যে ছবিখানি অতিশয় যতনে,
অশ্রুজলে অশ্রুজলে, মুছিয়া ফেলিব তাহা,
আর না আনিব মনে এই পোড়া জনমে।—
কিন্তু হা— বৃথা এ আশা, মরমের মরমে যা’
আঁকিয়াছি সযতনে শোণিতের আখরে,
এ জনমে তাহা আর, মুছিবে না, মুছিবেনা,
আমরণ রবে তাহা হৃদয়ের ভিতরে!
আমরণ কেঁদে কেঁদে, কাটিয়া যাইবে দিন,
নীরব আগুনে মন পুড়ে হবে ছাই লো!
<এ> মনের এ কথা গুলি গোপনে লুকায়ে রেখে
কতদিন বেঁচে রব ভাবিতেছি তাই লো!

**৬

*ইংরেজি গানের উল্লেখ এবং অশনাক্ত বাংলা পংক্তি

**৭

*মালতী পুঁথি
*এসো আজি সখা

«+++»
<সু+++ন রজনী, মেঘের আঁচল
{+++} +++ অধরে হাসিছে শশি,
বিমল জোছনা সলিলে মাজিয়া
আঁধার মুছিয়া ফেলেছে নিশি!>
এস আজি সখা বিজন পুলিনে
<দুজনে> বলিব মনের কথা;
মরমের তলে যাকিছু রয়েছে
লুকানো মরম-ব্যথা।
<সুচারু রজনী; হাসিধারা খানি
চাঁদের জ্যোছনা উথলি যায়
উথলি উঠিছে যমুনালহরী
উথলি বহিছে মলয় বায়>
সুচারু রজনী, মেঘের আঁচল
চাপিয়া অধরে হাসিছে শশি,
বিমল জ্যোছনা সলিলে মাজিয়া
আঁধার মুছিয়া ফেলেছে নিশি,
কুসুম কাননে বিনত আণনে
মুচকিয়া হাসে গোলাপ বালা,
বিষাদে মলিনা, সরমে নিলীনা,
সলিলে দুলিছে কমলিনী বধূ—
ম্লান রূপে করি সরসী আলা!
আজি, খুলিয়া ফেলিব প্রাণ
আজি, গাইব কতকি গান,
আজি, নীরব নিশীথে, চাঁদের হাসিতে
মিশাব’ অফুট তান!
দুই হৃদয়ের যত আছে গান
এক সাথে আজি গাইব,
দুই হৃদয়ের যত আছে কথা
দুইজনে আজি কহিব;
কতদিন সখা, এমন নিশীথে
এমন পুলিনে বসি,
মানসের গীত গাহিয়া ২
কাটাতে পাইনি নিশি!
<মনে পড়ে সখা> {স্বপনের মত} সেই ছেলেবেলা
সেই দিন সখা মনে কি হয়?
হৃদয় ছিল গো কবিতা মাখানো
প্রকৃতি আছিল কবিতাময়,
«কি» সুখে কাটিত পূরণিমা রাত
এই নদীতীরে আসি,
«কু»সুমের মালা গাঁথিয়া ২
গণিয়া তারকা রাশি।
«য»মুনা সুমুখে যাইত বহিয়া
সে যে কি সুখের গাইত গান,
ঘুম ঘুম আঁখি আসিত মুদিয়া
বিভল হইয়া যাইত প্রাণ!
«ক»তযে সুখের কল্পনা আহা
আঁকিতাম মনে মনে
«+++»রাটি জীবন কাটাইব <সুখে> {যেন}
«+++»
তখন কি {সখা} জানিতাম মনে
পৃথিবী কবির নহে
কলপনা যার যতই প্রবল
ততই সে দুখ সহে!
<যাক্ সখা যাক্— অতীতকালের
সমাধি মাঝারে আছে যা গাঁথা,
কি হবে তুলিয়া সে সব কথা।>
এমন পৃথিবী, <+++> শোভার আকর
পাখী হেথা করে গান
কাননে কাননে কুসুম ফুটিয়া
পরিমল করে দান!
আকাশে হেথায় উঠেগো তারকা
উঠে সুধাকর <শশি,> রবি,
বরণ বরণ জলদ দেখিছে
নদীজলে মুখছবি,
এমন পৃথিবী এও কারাগার
কবির মনের কাছে!
যেদিকে নয়ন ফিরাইতে যায়
সীমায় আটক আছে!
তাই <গে>{যে} গো সখা মনে ২ আমি
<+++> {+++} একটি বন,
সারাদিন সেথা ফুটে আছে ফুল,
গাইছে বিহগ গণ!
আপনার ভাবে হইয়া পাগল
<আছি> রাত দিন {হায় আছি গো} সেথা,
বিজন কাননে পাখীর মতন
বিজনে গাইয়া মনের ব্যথা!
কত দিন পরে পেয়েছি তোমারে,
ভূলেছি মরম জ্বালা;
দুজনে মিলিয়া সুখের কাননে
গাঁথিব কুসুম মালা!
দুজনে মিলিয়া পূরণিমা রাতে
গাইব সুখের গান
যমুনা পুলিনে করিব দুজনে
সুখ নিশা অবসান,
আমার এমন সঁপিয়া তোমারে
লইব তোমার মন
হৃদয়ের খেলা খেলিয়া খেলিয়া
কাটাইব সারাক্ষণ!
<+++>
এইরূপে সখা কবিতার কোলে
<যাইবে জীবন কাটিয়া>
পোহায়ে যাইবে প্রাণ
সুখের স্বপন দেখিয়া দেখিয়া
গাহিয়া সুখের গান।

**৮

*ইতিহাস
*ঝান্‌সীর রানী / ঝান্সী রাণী

«ইং»রাজ গবর্ণমেণ্ট <কি> ঝান্সীর বিধবা রাণীর রাজ্য হস্তগত করিলেন এবং তাঁহার রাজকোষে যাহা কিছু সম্পত্তি ছিল তাহাও অপহরণ করিলেন<,>{।} এইরূপে {+++} রাজ্যহীনা সম্পত্তিহীনা তেজস্বিনী রাজ্ঞী এই নিষ্ঠুর <+++> অপমা<ন>{নে} মনে মনে প্রতিহিংসার অগ্নি পোষণ করিতে লাগিলেন, এবং যে<+++>{ম}ন শুনিলেন, কম্পানির সৈনিকেরা বিদ্রোহী হইয়াছে অমনি, তাঁহার প্রতিহিংসা চরিত«+++» করিতে সুকুমার দেহ রণসজ্জায় সজ্জিত করিলেন। লক্ষ্মী বাইর বয়স বিংশতি বৎসরের কিছু অধিক হইবে, অত্যন্ত সুন্দরী, এবং তাঁহার শরীরও «+++» সমান বলিষ্ঠ।
ঝান্সী নগরী অত্যন্ত পরিপাটী ছিল; সরোবর ও বৃহৎ বৃক্ষাবলীর কুঞ্জমধ্যে স্থাপিত। চতুর্দ্দিকে দৃঢ় প্রাচীর। <প্রকা> একটি ক্ষুদ্র শৈলের উপর দুর্গবদ্ধ রাজ প্রাসাদ নির্ম্মিত হইয়াছে। বিদ্রোহের সময় ইংরাজরা সংবাদ পাইলেন যে ঝান্সী রাজ্ঞির এক ভৃত্য লক্ষণ রাও সৈনিকদের বিদ্রোহে+++ করিতে চেষ্টা পাইতেছে, এবং স্থানে ২ ঐ নিমিত্ত গুপ্ত চর নিয়োজিত হইয়াছে। অবশেষে ঝান্সী নগরীতে বিদ্রোহ অগ্নি জ্বলিয়া উঠিল। ক্যাপটেন ডানলপ হত হইলেন। «+++»+++ ইংরাজের <প> ছদ্মবেশে পলাইতে আরম্ভ করিল কিন্তু ধৃত ও হত হইল। ঝান্সীর বিদ্রোহী সৈন্যদের দ্বারা ইংরাজেরা পরাজিত হইলেন এবং লক্ষ্মীবাই তাঁহার «পৈ»ত্রিক সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হইলেন (1859)
«+++»58— সার হিউরোস্ সৈন্যদল সম্‌ভিব্যাহারে ঝান্সীতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন এবং গ্রানিট প্রস্তরে নির্ম্মিত, উচ্চ শৈলে স্থাপিত, <+++> নগর প্রাচীরে ব্রিটিশ-কামান গোলা বর্ষণ করিল। দুর্গ হইতে স্ত্রীলোকেরা কামান ছুঁড়িতে লাগিল, সৈনিকের খাদ্যাদি বহন করিতে লাগিল। ৩১ মার্চ রাণী দেখিলেন ইংরাজ শিবির পার্শ্বে তাঁতিয়া টোপী ও বানপূররাজের সৈন্য দল সঙ্কেত অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করিয়াছে, হর্ষ ধ্বনি ও তোপের শব্দে ঝান্সী দুর্গ প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠিল। পর দিন তাঁতিয়া টোপী ইংরাজ সৈন্যের সহিত যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইলেন কিন্তু ১৫০০ লোক নিহত রাখিয়া, ১৮ কামান ও অনেক খাদ্যাদি ফেলিয়া রাখিয়া বেটোয়ার পর পারে তাড়িত হইলেন।
যুদ্ধে প্রত্যহ রাণীর ৬০/৭০ জন করিয়া লোক হত হইতে লাগিল। রাণীর ভাল
কামানগুলির মুখ বন্ধ করা হইয়াছে এবং তাঁহার +++ ভাল গোলন্দাজেরা হত হইয়াছে।
নগর প্রাচীরে একটি গর্ত্ত খোদিত হইল এবং প্রাসাদ ও +++ প্রধান «+++» ইংরাজদের দ্বারা অধিকৃত হইল। প্রাসাদের মধ্যে দারুণ হাতাহাতি যুদ্ধ বাধিল। «+++» শরীর রক্ষকের একদল (৪০ জন) অশ্বালয়ের সম্মুখে দাঁড়াইয়া প্রাণ পণে যুদ্ধ করি«+++» লাগিল, ভূমি শায়ী <মুমূর্ষু> সৈন্যেরা মুমূর্ষু অবস্থাতেও শত্রুদের বিরুদ্ধে অস্ত্র «+++» করিতে লাগিল। একে একে সকলেই নিহত হইলে <একজন> অবশিষ্ট এক জন বারুদে আ«+++» ধরাইয়া দিল এবং তাঁহার মহত্বের ৮৬ দলের <+++> অনেকগুলিকে উড়াইয়া দিয়া আপনি উড়িয়া «+++» রাজ্ঞী <+++> কতকগুলি অনুচরের সহিত দুর্গ পরিত্যাগ করিয়া গিয়াছেন। শত্রুরা «+++» হইয়াছিল এবং প্রায় ধরিয়াছিল। লেপ্টেনেণ্ট বাওকর (Bowker) «+++»

**৯

*মালতী পুঁথি
*হা বিধাতা— ছেলেবেলা হতেই এমন

প্রথম সর্গ

হা বিধাতা— ছেলেবেলা হতেই এমন
দুর্ব্বল হৃদয় লয়ে লভেছি<+++> জনম,
আশ্রয় না পেলে কিছু হৃদয় আমার
অবসন্ন হোয়ে পড়ে লতিকার মত।
স্নেহ আলিঙ্গন পাশে বদ্ধ না হইলে
কাঁদে ভূমিতলে পোড়ে হোয়ে ম্রিয়মান।
তবে হে ঈশ্বর! তুমি কেন গো আমারে
ঐশ্বর্য্যের আড়ম্বরে করিলে নিক্ষেপ;
যেখানে সবারি হৃদি যন্ত্রের মতন;
স্নেহ প্রেম হৃদয়ের বৃত্তি সমুদয়
কঠোর নিয়মে যেথা হয় নিয়মিত।
কেন আমি হলেম না কৃষক-বালক,
ভায়ে ভায়ে মিলে মিলে করিতাম খেলা,
গ্রাম প্রান্তে প্রান্তরের পর্ণের কুটীরে
পিতামাতা ভাইবোন সকলে মিলিয়া
স্বাভাবিক হৃদয়ের সরল উচ্ছ্বাসে,
মুক্ত ওই প্রান্তরের বায়ুর মতন
হৃদয়ের স্বাধীনতা করিতাম ভোগ।
শ্রান্ত হোলে খেলা-সুখে সন্ধ্যার সময়ে
কুটীরে ফিরিয়া আসি ভালবাসি যারে
তার স্নেহ ময় কোলে রাখিতাম মাথা,
তাহইলে দ্বেষ ঘৃণা মিথ্যা অপবাদ
মুহূর্ত্তে মুহূর্ত্তে আর হতনা সহিতে।
হৃদয় বিহীন প্রাসাদের আড়ম্বর
গর্ব্বিত এ নগরের ঘোর কোলাহল
কৃত্রিম এ ভদ্রতার কঠোর নিয়ম
ভদ্রতার কাষ্ঠহাসি, নহে মোর তরে।
দরিদ্র গ্রামের সেই ভাঙ্গা চোরা প<থে>{থ},
গৃহস্থের ছোটখাট <+++> {নিভৃত} কুটী<রে>{র}
যেখানে কোথাবা আছে তৃণ রাশি রাশি,
কোথাবা গাছের তলে বাঁধা আছে গাভী
অযত্নে চিবায় কভু গাছের পল্লব
কভুবা দেখিছে চাহি বাৎসল্য-নয়নে
ক্রীড়াশীল কুটীরের শিশুদের দিকে<,>{।}
<+++>
কুটীরের বধূগণ উঠিয়া প্রভাতে
আপনার আপনার কাজে আছে রত।
সেক্ষুদ্র কুটীর আর ভাঙ্গাচোরা পথ,
দিগন্তের পদতলে বিশাল প্রান্তর
«+++» যৌবন ময় হৃদ<য়>{য়ে} যাহার
«+++» তৃণফুল শুকায় <নীরবে> নিভৃতে
«+++»
{ছবি দেখে কল্পনার স্বপ্নের মতন}
তাহইলে মধুময় কবিতার মত
<বিজনে পোহায়ে> {কেমন আরামে} যেত জীবন <আমার> {কাটিয়া।}

এমন হৃদয়হীন উপেক্ষার মাঝে
একজন ছিল মোর প্রেমের প্রতিমা,
অমিয়া, সে বালিকারে কত ভাল বাসি।
দিগন্তের দূর প্রান্তে <চন্দ্রময় +++> ঘুমন্ত চন্দ্রমা,±[\Bay\]±
ধবল জলদ জালে, আধো আধো ঢাকা—
বালিকা তেমনি আহা মধুর কোমল।
সেই বালা দয়া করি হৃদয় আমার
রেখেছিল জুড়াইয়া স্নেহের ছায়ায়।<+++>
অনন্ত-প্রণয়ময়ী রমণী <+++> তোমরা—
পৃথিবীর মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী।
তোমাদের স্নেহ ধারা যদি না বর্ষিত
হৃদয় হইত তবে মরুভূমি সম
স্নেহ দয়া প্রেম ভক্তি যাইত শুকায়ে।
তোমরাই পৃথিবীর সঙ্গীত, কবিতা,
স্বর্গ, সেত তোমাদের হৃদয়ে বিরাজে
সে হৃদয়ে স্নেহছায়ে দিলে গো আশ্রয়
পাষাণ-হৃদয় সেও যায় গো গলিয়া!
<যখন> কেহই <+++ছিল না> আশ্রয় যবে {ছিল না অমিয়া!}
জননী, ভগ্নীর মত বেসেছিলে ভাল
সেকি আর এ জনমে পারিব ভূলিতে?
বিষণ্ণ «+++»র এক বালকের পরে
সে যে কি স্নেহের ধারা করেছ বর্ষণ
চিরকাল হৃদয়ে তা’ রহিবে<+++> {মুদ্রিত।}
ওই স্নেহময় কোলে রাখি শ্রান্ত মাথা
কাতর হইয়া কত করেছি রোদন
কত না ব্যথিত হোয়ে আদরে যতনে
অঞ্চলে সে অশ্রু জল দিয়াছ মুছায়ে।
<+++> কবিতা লিখিলে ছুটে ওই কোলে গিয়া
ওই গলা ধোরে তাহা শুনাতাম কত
বাল্যহৃদয়ের মোর যত ছিল কথা
তোমার কাছেতে কিছু করিনি গোপন।
ওই স্নেহময় কোল ছিল স্বর্গ মোর
সেইখানে একবার মুখ লুকাইলে
সব শ্রান্তি সব জ্বালা যেত দূর হোয়ে।
শ্রান্ত শিশুটির মত ওই কোলে যবে
নীরবে নিষ্পন্দ হোয়ে রহিতাম শুয়ে
অনন্ত স্নেহেতে পূর্ণ আনত নয়নে
«+++» মুখের পানে ৲চাহিয়া৲ ৴রহিতে৴
তখন কি হর্ষে হৃদি যাইত ফাটিয়া!
কত বার করিয়াছি কত অভিমান,
আদরেতে উচ্ছ্বসিয়া কেঁদেছি কতই

**১০

*Moor-এর Irish Melodies-এর বাংলা অনুবাদ

*Childe Harold-এর Pilgrimage, Canto 2, xxxii-xxxiv-র বাংলা অনুবাদ

**১১-১৮

*কালিদাস-এর কুমার সম্ভব-এর বাংলা অনুবাদ

**১৯

*সন্ধ্যাসংগীত (সংযোজন)
*বিষ ও সুধা

«+++»
«+++» অন্ধকার সমাধির পরে
তারকার ফুল রাশি দিল ছড়াইয়া।
<+++> অতি ধীরে সাবধানে নায়ক যেমন
ঘুমন্ত প্রিয়ার মুখ করয়ে চুম্বন,
দিন পরিশ্রমে ক্লান্ত পৃথিবীর দেহ
অতি ধীরে পরশিল সায়াহ্ণের বায়ু।
দুরন্ত তরঙ্গগুলি যমুনার কোলে
সারাদিন খেলা করি পড়েছে ঘুমায়ে।
ভগ্ন দেবালয় খানি যমুনার ধারে,
শিকড়ে শিকড়ে যার ছায়ি জীর্ণদেহ
বট অশথের গাছ জড়াজড়ি করি
আঁধারিয়া রাখিয়াছে হৃদয় যাহার,
দুয়েকটি বায়ূচ্ছ্বাস পথ ভূলি গিয়া
আঁধার আলয়ে তার হোয়েছে আটক
অধীর হইয়া তারা হেথায় হোথায়
হুহু করি বেড়াইছে পথ খুঁজি খুঁজি!
শুন সন্ধ্যে আবার এসেছি আমি হেথা—
নীরব আঁধারে তব বসিয়া বসিয়া
তটিনীর কলধ্বনি শুনিতে এয়েছি!
হে তটিনী— ওকি গান গাইতেছ তুমি
দিন নাই রাত্রি নাই একতানে শুধু—
এক সুরে একি গান গাইছ সতত!
এত মৃদুস্বরে— ধীরে— যেন ভয় করি
সন্ধ্যার প্রশান্ত স্বপ্ন না যায় ভাঙ্গিয়া!
এ নীরব সন্ধ্যাকালে— তব মৃদু গান
একতান ধ্বনি তব শু<নি>{নে} মনে হয়
এ হৃদি গানের যেন শুনি প্রতিধ্বনি!
মনে হয় যেন তুমি আমারি মতন
কি এক প্রাণের ধন ফেলেছ হারায়ে
এ কি গান গাইতেছ দিন রাত্রি ধরি!
{সেগানের নাইক বিরাম অবসান।}
হতভাগ্য কবি আমি কি বলিব আর—
যে কথা বলিতে যাই কহি সেই কথা
যে গান গাহিতে যাই গাই সেই গান
এ পুরাণো কথা আর এ পুরাণো গান
কেহই— কেহই যদি না শুনিতে চায়
অভাগার অশ্রু সাথে অশ্রু না মিশায়—
তবে আর কাহারেও শুনাতে চাহিনা—
গাহিব আপন মনে কাঁদিব আপনি—
তটিনীর কলস্বরে— নিশীথ নিশ্বাসে<র>—
«+++»বষার অবিরল বৃষ্টি বারি ধারে
«+++»ন গানের প্রতিধ্বনি পাইব শুনিতে!
«+++» স্মৃতি এস তুমি এ ভগ্ন-হৃদয়ে
«+++»য়াহ্ণ-+++ মৃদু শেষ রশ্মি-রেখা
«+++» অন্ধকার মেঘে
«+++»
যাহা«+++»
সমস্ত মালতী«+++»
ছেলেবেলাকার মোর স্মৃতির «+++»
দুই ভাই বোনে মো<রে>{রা} আছিনু কেমন—
আমি আছিলাম অতি শান্ত ও গম্ভীর—
মালতী প্রফুল্ল অতি সদা হাসি হাসি—
ছিলনা সে উচ্ছ্বসিনী নির্ঝরিণী সম—
শৈশব তরঙ্গ<ভরে>{বেগে} চঞ্চলা সুন্দরী—
ছিল না সে লজ্জাবতী লতাটির মত
সরম-সৌন্দর্য্য ভরে ম্রিয়মাণ পারা—
আছিল সে প্রভাতের ফুলের মত
প্রশান্ত হরষে অতি মাখানো মুখানি—
সে হাসি গাহিছে <+++> {ধীরে} উষার সঙ্গীত
সকলি পবিত্র আর সকলি বিমল।
মালতীর শান্ত সেই হাসিটির সাথে
হৃদয়ে পড়িত যেন প্রভাত-শিশির—
নূতন জীবন যেন সঞ্চরিত মনে!
ছেলেবেলাকার <সেই> {যত} কবিতা আমার
সে হাসির কিরণেতে উঠেছিল ফুটি—
মালতী আঘাত দিত হৃদয়ের তারে
তাইতে শৈশব-গান উঠিত জাগিয়া।—
এমনি আসিত সন্ধ্যা— শ্রান্ত জগতেরে
স্নেহময় কোলে তার ঘুম পাড়াইতে।—
সুবর্ণ-সলিল-সিক্ত সায়াহ্ণ অম্বরে
গোধূলির অন্ধকার <{+++}> <আসিত> {নিঃশব্দ চরণে—} <এমনি>
তারাময় যবনিকা দিত বিহাইয়া,—
মালতীরে লয়ে পাশে আসিতাম হেথা
সন্ধ্যার সঙ্গীত-স্বরে মিলাইয়া স্বর
মৃদুস্বরে শুনাতেম শৈশব কবিতা!
হর্ষময় গর্ব্বে তার আঁখি উজলিত—
অবাক্ ভক্তির ভাবে ধরি মোর হাত
মুখপানে একদৃষ্টে রহিত চাহিয়া!
তার সে হরষহেরি আমারো হৃদয়ে
কেমন নির্দ্দোষ-গর্ব্ব উঠিত উথলি!
ক্ষুদ্র এক কুটীর আছিল আমাদের—
নিস্তব্ধ মধ্যাহ্ণে আর নীরব সন্ধ্যায়—
দূর হতে তটিনীর কলস্বর আসি—
শান্ত কুটীরের কানে <কহি> গাহিত কেমন
ঘুম পাড়াবার গান অতি ধীরে ধীরে।
চারিদিকে যেত খুলে দৃশ্য মনোহর—
হেথা নদী— হোতা হ্রদ— হোথা নির্ঝরি«নী»
গ্রামের কুটীর গুলি গাছের আড়ালে।
এইখানে— এইখানে শিখেছিনু <+++> {+++}
কল্পনার কাছ হোতে সেসব কাহি«নী»
মর্ত্ত্যের ভাষায় যাহা নারি প্রকাশি«+++»
কল্পনা «+++»য়ে মোর বাণীর «+++»
«+++»

**২০

«+++»
«+++»এই বিশ্ব-জগতের
বাহিরের আবরণ খুলে যায় যেন,—
জগতের মর্ম্মগত সৌন্দর্য্যভাণ্ডার
এ চোখের সামনে যেন হয় প্রকাশিত!
দুই জনে আছিলাম কল্পনার শিশু—
বনে ভ্রমিতাম যবে, সুদূর নির্ঝরে
বনশ্রীর পদধ্বনি পেতাম শুনিতে!
যাহা কিছু দেখিতাম সকলেরি মাঝে
জীবন্ত প্রতিমা যেন পেতেম দেখিতে!
ক্রমশঃ বালক কাল হোল অবসান...
নীরদের প্রেমদৃষ্টে পড়িল মালতী
নীরদের সাথে তার হইল বিবাহ।
মাঝে মাঝে যাইতাম তাদের আলয়ে—
দেখিতাম মালতীর সে শান্ত হাসিতে
কুটীরের গৃহখানিরেখেছে উজলি!
শান্তির প্রতিমাসম বিরাজিত যেন!
সঙ্গীহারা হোয়ে আমি ভ্রমিতাম একা—
নিরাশ্রয় এহৃদয় অশান্ত হইয়া—
কাঁদিয়া উঠিত যেন অধীর উচ্ছ্বাসে,
কোথাও পেতনা যেন আরাম বিশ্রাম!
«অ»ন্যমনে আছি যবে, হৃদয় আমার
সহসা স্বপন ভাঙ্গি উঠিত চমকি—
সহসা পেত না ভেবে, পেত না খুঁজিয়া—
আগে কি আছিল <আর> {যেন} এখন তা নাই!
প্রকৃতির কি যেন কি গিয়াছে হারায়ে
মনে তাহা পড়িছেনা। ছেলেবেলা হোতে
প্রকৃতির যেই ছন্দ এসেছি শুনিয়া—
সেই ছন্দো ভঙ্গ যেন হোয়েছে তাহার—
সেই ছন্দে কি কথার পোড়েছে অভাব,
কানেতে সহসা তাই উঠিত বাজিয়া
«হৃ»দয় সহসা তাই উঠিত চমকি!
জানি না কিসের তরে, কি মনের দুখে
একটি দীর্ঘশ্বাস উঠিত উচ্ছ্বসি!—
«শি»খর হোতে শিখরে— বন হোতে বনে
«অ»ন্য মনে একেলাই বেড়াতাম ভ্রমি
সহসা চেতন পেয়ে উঠিয়া চমকি
«স»বিষ্ময়ে ভাবিতাম কেন ভ্রমিতেছি,
কেন ভ্রমিতেছি তাহা পেতেম না ভাবি!
একদিন নবীন বসন্ত সমীরণে
«+++» কথা কও যবে খুলেছে হৃদয়,
«+++»দে সুখেতে মাখা প্রশান্ত কি ভাব
«+++»ণর ভিতরে যবে রয়েছে ঘুমায়ে
«+++» বালিকা এক নির্ঝরের ধারে
«+++» তুলিতেছে আঁচল ভরিয়া<।>{,}
«+++» কুন্তল জাল পোড়েছে এলায়ে।
{মুখেতে পড়েছে তার উষার কিরণ}
«+++» গেলাম তার— কাঁটা বাছি ফেলি
«+++» দিলাম তুলিয়া।
কহিতাম বালিকারে «+++»
শুনিসে হাসিত কভু, শুনিত না কভূ—
আমি ফুল তুলে দিলে ফেলিত ছিঁড়িয়া
ভর্ৎসনার অভিনয়ে কহিত কতকি!—
কভু বা ভ্রূকুটী করি রহিত বসিয়া—
হাসিতে হাসিতে কভু যাইত পালায়ে!
অলীক সরমে কভু হইত অধীর!—
কিন্তু তার ভ্রূকুটিতে, সরমে, সঙ্কোচে
লুকানো প্রেমেরি কথা করিত প্রকাশ।
এইরূপে প্রতি উষা যাইত কাটিয়া—
একদিন সে বালিকা না আসিত যদি—
হৃদয় কেমন যেন হইত বিকল—
প্রভাত কেমন যেন যেতনা কাটিয়া—
অবসাদে সারাদিন যেত যেন ধীরে!—
বর্ষচক্র আর বার আসিল ফিরিয়া
নূতন বসন্তে পুনঃ হাসিল ধরণী—
প্রভাতে অলসভাবে বসি তরুতলে—
দামিনীরে শুধালেম কথায় কথায়
“দামিনী, তুমি কি মোরে ভালবাসো <সখি> {বালা}?”
অলীক সরম-রোষে <+++> {ভ্রূকুটি} করিয়া—
ছুটিয়া পলায়ে গেল দূর-বনান্তরে—
জানিনা কি ভাবি পুনঃ ছুটিয়া আসিয়া
“ভালবাসি— ভালবাসি” কহিয়া অমনি
সরমে মাখানো মুখ লুকালো এ বুকে!
এইরূপে যেত দিন অস্ফুট স্বপনে!
কত ক্ষুদ্র অভিমানে কাঁদিত বালিকা—
কত ক্ষুদ্র কথা লয়ে হাসিত হরষে—
কিন্তু জানিতাম নাকো এই ভাল বাসা
বালিকার ক্ষণস্থায়ী কল্পনা কেবল।।
আর— <বরষের> {কিছুকাল} পরে এই দামিনীরে
যে কথা বলিয়াছিনু আজো মনে আছে—
সুদূর-পর্ব্বতশিখরে ইন্দ্রধনু +++থা—
<বিচিত্র বরণে> {মধুর সৌন্দর্য্য} +++ষে পথিক নয়ন—
যেমন নিকটে যাও অমনি তাহার—
বিচিত্র বরণ যায় শূন্যে মিশাইয়া
<মরিতে ছিল না সাধ তোমাতরে ভাই
জানি আমি গেলে আর কে রবে তোমার
আমার মতন ভাল কে বাসিবে আর?
মরিতে ছিল না সাধ>

**২১

*প্ল্যানচেট-যোগে পারলৌকিক প্রশ্নোত্তরের আংশিক প্রতিবেদন

**২২

*অসংলগ্ন পংক্তি

শৈশব সঙ্গীত
*অতীত ও ভবিষ্যৎ

বোটে লিখিয়াছি
মঙ্গলবার +++ আশ্বিন ১৮৭৪

কেমন <এ> {গো} আমাদের ছোট এ কুটীর খানি;
সমুখে নদী টি যায় চলি,
<চারিদিক ঘিরি ঘিরি ছায়া>
মাথার উপরে তার বট অশথের <গাছ> {ছায়া},
সামনে বকুল গাছ গুলি!
সারাদিন হুহু করি, বহিছে নদীর বায়ু
ঝর ঝর দুলে গাছপালা,
ভাঙ্গা {চোরা} বেড়া গুলি, উঠেছে লতিকাতায়
ফুল ফুটে করিয়াছে আলা।
<সুমুখে> {ওদিকে} পড়িয়া মাঠ, দূরে দুচারিটি গরু
চিবায় নবীন তৃণদল।
কেহবা গাছের ছায়ে, কেহবা খালের ধারে
পান করে সুশীতল জল।
ওগো কল্পনা বালা, কত সুখে ছেলেবেলা
ওইখানে করেছি যাপন,
সেদিন পড়িলে মনে, প্রাণ যেন কেঁদে উঠে
হুহু কোরে উঠে শূণ্য মন<;>{।}
<ছেলেবেলা হোতে, +++ তোমারি বাণির <{+++}>
এ পরাণ রেখেছি ভরিয়া>
নিশীথে নদীর <+++> {পরে} ঘুমিয়ে পড়েছে {চাঁদ}
সাড়া শব্দ নাই <+++> {চারি পাশে},
একটি দুরন্ত ঢেউ, জাগেনি নদীর কোলে
পাতাটিও নড়েনি বাতাসে
«ত»খন যেমন ধীরে, দূর হাতে দূরপ্রান্তে
নাবিকের বাঁশরী{র} <উচ্ছ্বাস> {গান}
«+++» করি সুর, না পারে ধরিতে মন,
হুহু করি উঠে গো পরান!
«+++» হারায়ে গেছে কি যেন না পাই খুঁজে
কি কথা গিয়াছি যেন ভূলে,
«+++» স্বপন সম, সরসের সরসেতে
কি যেন কি জাগাইয়া তুলে।
«+++»মণি +++কলপনা, তুমি ও বীণায় যবে
«+++» তাহে সেদিন করে গান
«+++» সরস <+++> {পূর্ব +++} প্রতিধ্বনি
«+++» +++
«+++» থাকিতাম চিরকাল
«+++» ছেলেবেলা
«+++»
<কখন খানি+++ প্রশান্ত সুরের যেই
প্রভাতের সুরভি নিশ্বাসে,>
ঘুম ভাঙ্গা আঁখি মেলি যখন প্রফুল্ল উষা
ফেলেন গো সুরভি নিশ্বাস,
ঢেউগুলি জেগে উঠি, পুলিনের কানে কানে
মৃদু কথা কহে ফুস্ ফাস্।
তেমনি উঠিত হৃদে, প্রশান্ত সুখের <ঢেউ,> {ঊর্ম্মি}
অতি মৃদু অতি সুশীতল
বহিত সুখের শ্বাস; নাহিয়া শিশির জলে
ফেলে যথা কুসুম সকল।
অথবা <যখন অতি> {যেমন যবে} প্রশান্ত সায়াহ্ণে <কালে> {আহা}।
<+++> {ডুবে সূর্য্য} সমুদ্রের কোলে,
বিষন্ন কিরণ তার, শ্রান্ত বালকের মত
পড়ে থাকে সুনীল সলিলে।
<+++> নিস্তব্ধ সকল দিক, একটি ডাকেনা পাখী
একটুও বহেনা বাতাস।
তেমনি কেমন এক, গম্ভীর বিষন্ন সুখ
হৃদে জাগাইত দীর্ঘশ্বাস।
এইরূপ কত কি যে, হৃদয়ের ঢেউ খেলা
দেখিতাম বসিয়া বসিয়া
মরমের ঘুমঘোরে, কত দেখিতাম স্বপ্ন
যেত দিন হাসিয়া খুসিয়া।
বনের পাখীর মত, অনন্ত আকাশ তলে
গাহিতাম অরণ্যের গান,
আর কেহ শুনিত না, <+++> {প্রতিধ্বনি জাগিত না,}
শূন্যে মিলাইয়া যেত তান।
এত দিনে পরে <+++> আজ, অয়ি গো কল্পনা দেবী
কি হল এমন দুরদশা
অতীতে সুখের স্মৃতি, বর্ত্তমানে, দুখজ্বালা
ভবিষ্যতে দারুণ দুরাশা,
যেনরে আমারি <+++> ঘোর মনের আঁধার ছায়া
<+++> ঢাকিয়াছে স+++ল ধরণী
এইযে বাতাস বহে, আমারি মর্ম্মের যেন
দুখ নিশ্বাসের প্রতিধ্বনি
যেনরে এ জীবনের আঁধার সমুদ্রে আমি
ভাসায়ে দিয়াছি জীর্ণ তরি
এসেছি যেখান হতে, অস্ফুট সে নীল তট
এখনো রয়েছে দৃষ্টি ভরি’।
সে«+++» ফিরায়ে আঁখি, এখনো দেখি সে «+++»
«+++»

**২৩

নানা বর্ণময় মেঘ, মিশেছে বনের শিরে
এখনো ঐ যে যায় দেখা <+++>
যেতেছি যেখানে ভাসি, <+++> {সেদিকে চাহিয়া দেখি}
কিছুইত নাপাই উদ্দেশ।
আঁধার তরঙ্গরাশি ≮সুদূর≯ <{অকূল}> দিগন্তে মিশে
উদ্গত অকূল অশেষ।
ক্ষুদ্র জীর্ণ ভগ্ন তরি, একাকী যাইবে ভাসি;
যতদিনে ডুবিয়া না যায়
হুহু করি তবে বায়ু, গর্জ্জিবে উন্মত্ত ঊর্ম্মি
ঝকমকি বিদ্যুত শিখায়

**২৩

*মালতী পুঁথি
*আমার এ মনোজ্বালা

আমার এ মনোজ্বালা কে বুঝিবে সরলে
কেন যে এমন করে, ম্রিয়মান হোয়ে থাকি
কেন যে নীরবে হেন বসে থাকি বিরলে।
এ যাতনা কেহ যদি বুঝিতে পারিত দেবি,
তবে কি সে আর কভু পারিত গো হাসিতে?
হৃদয় আছয়ে যার সঁপিতে পারে সে প্রাণ
এ জ্বলন্ত যন্ত্রনার এক তিল নাশিতে!
হে সখী হে সখাগণ, আমার মর্মের জ্বালা
কেহই তোমরা যদি না পারগো বুঝিতে,
কি আগুণ জ্বলে তার <হৃদয়ের মূঢ়> {নিভৃত গভীর} তলে
কি ঘোর ঝটিকাসনে হয় তারে যুঝিতে!
তবে গো তোমরা মোরে <+++ কথা> {শুধায়ো না} শুধায়ো না
কেন যে এমন করে রহিয়াছি বসিয়া
বিরলে আমারে হেথা, একলা থাকিতে দাও,
«আমা»র মনের কথা বুঝিবে কি করিয়া?
«+++»মাণ মুখে, এই শূন্যপ্রায় নেত্রে
«+++»লঙ্ক সঁপিগো আমি তোমাদের হরষে;
«+++» পূর্ণিমা যামিনী যথা, মলিন হইয়া যায়
«+++» ক্ষুদ্র এক অন্ধকার {+++} জলদের পরশে
«+++» কিন্তু কি করিব বল, কিচাও কিদিব আমি
তোমাদের আমোদ গো একতিল বাড়াতে
হৃদয়ে এমন জ্বালা, কি কোরে হাসিব বল
কিছুতে বিষন্ন ভাব পারিনাযে তাড়াতে
বিরক্ত হয়োনা সখি, অমন বিরক্ত নেত্রে
আমার মুখের পানে রহিও না চাহিয়া,
কি আঘাত লাগে প্রানে, দেখি ও বিরক্ত মুখ
কেমনে সখি গো তাহা বুঝাইব কহিয়া?
ব্যথায় পাইয়া ব্যথা, যদি গো শুধাতে কথা
অশ্রুজলে মিশাইতে যদি অশ্রুজল
আদরে স্নেহের স্বরে, একটি কহিতে কথা,
অনেক নিভিত তবু এ হৃদি অনল
«জা»নিতাম ওগো সখি, কাঁদিলে <+++> মমতা পাব,
কাঁদিলে বিরক্ত হবে এ কি নিদারুণ?
চরণে ধরি গো সখি, একটু করিও দয়া
নহিলে নিভিবে কিসে বুকের আগুন!
«+++» মমতা তো, পেলেমনা ওগো দেবি,
«+++»ণী তুমি এস কল্পনা
«+++»

**২৩

*মালতী পুঁথি
উপহার গীতি

<ভূমিকায়>
ছেলেবেলা হোতে বালা, যত গাঁথিয়াছি মালা
যত বনফুল আমি তুলেছি যতনে
ছুটিয়া তোমারি কোলে, ধরিয়া তোমারি গলে
<তোমারি চরণে তব> পরায়ে দিয়াছি সখি তোমারি চরণে।
আজো গাঁথিয়াছি মালা, তুলিয়া বনের ফুল
তোমারি চরণে সখি দিবগো পরায়ে—
নাহয় ঘৃণার ভরে, দলিও চরণ তলে
হৃদয় যেমন কোরে দলেছ দুপায়ে।
পৃথিবীর নিন্দাযশে, কটাক্ষ করিনা বালা
তুমি যদি সোহাগেতে করহ গ্রহণ
আমার সর্ব্বস্বধন, কবিতার মালা গুলি
পৃথিবীর তরে আমি করিনি গ্রন্থন।
আমি যেসকল গান গাই গো মনের সুখে
সপ্তসুরে পূর্ণ করি এ শূন্য আকাশ
পৃথিবীর আর কেহ, শুনুক্ বা না শুনুক্
তুমি যেন শুন বালা, এই অভিলাষ!
তোমার লাগিবে ভালো, তুমি গো বলিবে ভালো
গলাবে তোমারি মন এ সঙ্গীত ধ্বনি
আমার মর্ম্মের কথা, <পারিবে বুঝিতে> {তুমিই বুঝিবে সখি}
আর কেহ না বুঝুক্ খেদ নাহি গণি
এক দিন মনে পড়ে«+++» যাহা তাহা গাইতাম
সকলি তোমার সখি লাগিত গো ভাল
নীরবে শুনিতে তুমি, সমুখে বহিত নদী
মাথায় ঢালিত চাঁদ পূর্ণিমার আলো।
সুখের স্বপন সম, সেদিন গেল গো চলি
অভাগা অদৃষ্টে হায় {এ} জ<নমে>{ন্মে}র <+++>তরে
আমার মনের গান <শুনিবে +++> {মর্ম্মের রোদনধ্বনি}
<আবার> স্পর্শও করেনা <+++> {আজ} তোমার অন্তরে।
তবুও— তবুও সখি তোমারেই শুনাইব
তোমারেই দিব সখি যা আছে আমার।
দিনু যা’ মনের সাথে, তুলিয়া লও তা হাতে
ভগ্ন হৃদয়ের এই প্রীতি উপহার।

**২৩

*কবি-কাহিনী
*প্রথম সর্গ

±Les Poetics হইতে অনুবাদিত±

বাড়িতে
১ কার্ত্তিক মঙ্গলবার <সমাপন>

শুন কলপনা বালা, ছিল <এক> {কোন} কবি
বিজন কুটীরে এক। ছেলেবেলা হোতে
তোমার অমৃত পানে আছিল মজিয়া<—>{।}
তোমার বীণার ধ্বনি <+++> ঘুমায়ে ঘুমায়ে
শুনিত, দেখিত কত সুখের স্বপন।
বালক আছিল যবে সে অল্প বয়সে
হৃদয় আছিল তার সমুদ্রের মত,
সে সমুদ্রে চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারকার
প্রতিবিম্ব দিবানিশি পড়িত খেলিত।
সে সমুদ্র প্রণয়ের জোছনা পরশে
লঙ্ঘিয়া তীরের সীমা উঠিত উথলি।
<এমন> সে সমুদ্র আছিল {গো} এমন বিস্তৃত
«+++» পৃথিবী দেবি, পারিত বেহশটিতে
«+++»
{«+++»কী আপন মনে <স> সরল শিশুটি
«+++»রি কমল বনে করিত সে খেলা
«+++»কি <+++> গান গাইত হরষে
«+++» ফুলে গাঁথিত মালিকা}

**২৪

দুরন্ত শিধুর মত মুক্তবায়ু ধারা,
দিবানিশি হুহু করি বেড়াত খেলিয়া।
বালকের হৃদয়ের গূঢ় তলদেশে
কত যে রতনরাশি ছিল গো লুকানো
কেহ জানিতনা কেহ পেতনা দেখিতে!
প্রকৃতি আছিল তার সঙ্গিনীর মত
নিজের মনের কথা যত কিছু ছিল
কহিত প্রকৃতি দেবী বালকের কানে
প্রভাত সমীর যথা নিশ্বাস ফেলিয়া
কহে কুসুমের কানে মর্মের বারতা।
নদীর মনের গান বালক যেমন
বুঝিত, এমন আর কেহ বুঝিতনা
কুসুমের মরমের সুরভি শ্বাসের
তুমি{ই} কল্পনা <+++> {তারে} দিতে +++খ্যা করি।
বিহঙ্গ তাহার কাছে <+++> গাহিত যেমন
এমন কাহারো কাছে গাহিত না আর।
তাহার নিকট দিয়া যেমন বহিত
এমন কাহারো কাছে বহিতনা বায়।
যখনি গো নিশীথের শিশিরাস্রু <+++> দলে
ফেলিতেন উষাদেবী সুরভি নিশ্বাস
গাছপালা লতিকার পাতা নড়াইয়া,
ঘুম ভাঙ্গাইয়া দিয়া ঘুমন্ত নদীর
যখনি গাইত বায়ু বন্য গান তার
তখনি বালক কবি ছুটিত প্রান্তরে
দেখিত ধান্যের শিষ দুলিছে পবনে
দেখিত একাকী বসি গাছের তলায়
+++ জলদময় সুবর্ণ অঞ্চল
দূর দিগন্তের প্রান্তে পড়েছে খসিয়া।
যখনি নিশীথে চাঁদ সুনীল আকাশে
সুপ্ত বালকের মত ঘুমায়ে ঘুমায়ে
সুখের স্বপন দেখি হাসিত নীরবে,
<তখনি> ছুটিয়া <বসি> তটিনী<র> তীরে দেখিতসে কবি,
স্নান করি জ্যোছনায় উপরে হাসিছে
সুনীল আকাশতল; নিম্নে স্রোতস্বিনী,
সহসা সমীরণের পাইয়া পরশ
<+++> দুয়েকটি ঢেউ কভু <উঠিল> জাগিয়া {উঠিছে।}
ভাবিত নদীর পানে চাহিয়া চাহিয়া,
নিশাই কবিতা আর দিবাই বিজ্ঞান।
দিবসের আলোকেতে সবি অনাবৃত
সকলি রয়েছে খোলা চক্ষের সামনে
ফুলের প্রত্যেক কাঁটা পাইবে দেখিতে।
দিবালোকে চাও যদি বনভূমি পানে,
কাঁটা খোঁচা কর্দ্দমাক্ত বীভৎস জঙ্গল
তোমার চখের পরে হবে প্রকাশিত!
দিবালোকে মনে হয় সমস্ত জগৎ
নিয়মের যন্ত্রচক্রে ঘুরিছে ঘর্ঘরি।
কিন্তু কবি নিশাদেবী কিমোহন মন্ত্র
«+++»মুদয় জগতের পরে,
«+++» যেন রহস্যে পূরিত।
«+++» মতন
ওই স্তব্ধ নদী জলে চন্দ্রের আলোকে
পি«+++»য়া চলিতেছে যেমন তরণী,
তেমনি সুনীল ওই আকাশ সলিলে
ভাসিয়া চলেছে যেন সমস্ত জগৎ,
সমস্ত ধরারে যেন দেখিয়া নিদ্রিত,
একাকী <বসিয়া ধীরে> গম্ভীর কবি ≮নিশা≯ দেবী<+++> {ধীরে}
তারকার ফুলমালা জড়ায়ে মাথায়
জগতের গ্রন্থে কত লিখিছে কবিতা।
এইরূপে সে বালক কতকি ভাবিত।
<+++> নির্ঝরিণী, সিন্ধুবেলা, পর্ব্বত গহ্বর
সকলি আছিল তার সাধের বসতি,
তার প্রতি তুমি এত ছিলে অনুকূল
জগতের সর্ব্বত্রই ৲পাইত৲ ৴শুনিতে৴
তোমার বীণার ধ্বনি, কখনো শুনিত
প্রস্ফুটিত গোলাপের হৃদয়ে বসিয়া
বীণা লয়ে বাজাইছ অস্ফুট কি গান।
কনক কিরণময় উষার জলদে
একাকী পাখীর সাথে গাইতে কি গীতি
তাই শুনি যেন তার ভাঙ্গিত গো ঘুম।
অনন্ত তারা খচিত <নীয়> নিশীথ গগনে
বসিয়া গাইতে তুমি কি গম্ভীর গান,
তাই শুনি সে যেমন <বিহ্বল> হইয়া বিহ্বল
নীরবে আকাশ পানে রহিত চাহিয়া।
নীরব নিশীথে যবে একাকী রাখাল
সুদূর কুটীর তলে বাজাইত বাঁশি,
তুমি ত তাহার সাথে মিলাইতে ধ্বনি
সে ধ্বনি পশিত তার প্রাণের ভিতর।
নিশার আঁধার কোলে জগৎ যখন
দিবসের পরিশ্রমে ৲পড়িত৲ ৴ঘুমায়ে৴
তখন বালক উঠি তুষার <+++> মণ্ডিত
সমুচ্চ পর্ব্বতশিরে, <+++> ৲গাইত৲ ৴একাকী৴,
প্রকৃতি বন্দনা-গান মেঘের মাঝারে।
সে গম্ভীর গান তার কেহ শুনিতনা
কেবল আকাশ ব্যাপী স্তব্ধ তারকারা
একদৃষ্টে মুখ পানে রহিত চাহিয়া—
কেবল পর্ব্বত শৃঙ্গ করিয়া আঁধার
সরল পাদপ রাজি নিস্তব্ধ গম্ভীর
ধীরে ধীরে শুনিত গো তাহার সে গান,
কেবল সুদুর বনে দিগন্ত বালার
হৃদয়ে সে গান পশি প্রতিধ্বনি রূপে
মৃদুতর হোয়ে {পুন} আসিত ফিরিয়া।
কেবল সুদূর শৃঙ্গে নির্ঝরিণী বালা
সে গম্ভীর গীতি সাথে কণ্ঠ মিশাইত
নীরবে তটিনী যেত সুমুখে বহিয়া
নীরবে নিশীথ বায়ু কাঁপাত <+++> পল্লব।
<কুন্তলে জড়িত যত কুসুমের মালা।>

**২৫

*কবি কাহিনী
*তৃতীয় সর্গ

«+++»শি
«+++» <+++>
«+++»গ্ন ধরা, নীরব রজনী
<«+++»র ডাল পালা গুলি>
«+++»কার ময় গাছ গুলি
«+++»র উপরে মাখি রজত জোছনা,
শাখায় শাখায় সব করি জড়াজড়ি,
কেমন গম্ভীর ভাবে রোয়েছে দাঁড়ায়ে।
হেথায় ঝোপের মাঝে প্রচ্ছন্ন আঁধার
হোথা সরসীর বুকে প্রশান্ত জোছনা,
ছুটিয়া চলেছে হেথা শীর্ণ স্রোতস্বিনী
তরঙ্গিল বুকে তার পাদপের ছায়া
ভেঙ্গে চুরে কত শত ধরিছে মূরতি।
এমন নীরব বন নিস্তব্ধ গম্ভীর
শুধু দূর শৃঙ্গ হোতে ঝরিছে নির্ঝর,
শুধু এক পাশ দিয়া সঙ্কুচিত অতি
তটিনীটি সরসরি যেতেছে চলিয়া।
অধীর বসন্ত বায়ু মাঝে মাঝে শুধু
ঝর ঝরি কাঁপাইছে গাছের পল্লব।
এহেন নিস্তব্ধ রাত্রে কত বার আমি
গম্ভীর অরণ্য মাঝে করেছি ভ্রমণ
স্নিগ্ধরাত্রে গাছপালা ঝিমাইছে যেন
<পড়েছে তাদের> ছায়া {তার পোড়ে আছে} হেথায় হোথায়।
দেখিয়াছি, নীরবতা যত কথা কয়
প্রাণের ভিতর বাগে, এত কেহ নয়।
দেখি যবে অতি শান্ত জোছনায় মজি
নীরবে সমস্ত ধরা রয়েছে ঘুমায়ে
নীরবে পরশে দেহ বসন্তের বায়
জানিনা সুখে কি দুখে প্রাণের ভিতর
উচ্ছ্বসিয়া উথলিয়া উঠে গো যেমন!
কি যেন হারায়ে গেছে খুঁজিয়া না পাই,
কি কথা ভূলিয়ে যেন গিয়েছি সহসা,
বলা হয় নাই যেন প্রাণের কি কথা,
প্রকাশ করিতে গিয়া পাইনা তা’ খুঁজি!
কে আছে এমন যার <+++> এহেন নিশীথে
পুরাণো সুখের স্মৃতি উঠেনি উথলি।
কে আছে এমন যার জীবনের পথে
এমন একটি সুখ যায়নি হারায়ে
«যে» হারা সুখের তরে দিবানিশি তার
«+++»দয়ের একদিক শূন্য হোয়ে আছে!
«+++»ন নীরব রাত্রে কখনো কি «+++»গো
«+++»ই মর্ম্মভেদী একটি «+++»
কত স্থানে আজ রাত্রে নিশীথ-প্র«+++»
উঠিছে প্রমোদ ধ্বনি বিলাসীর «+++»
<স্বপ্নেও> {মুহূর্ত্ত} ভাবেনি তারা আজ নিশীথে«+++»
কত হৃদি পুড়িতেছে নীরব অনলে
{কত শত হতভাগ্য আজ নিশীথেই}
হারায়ে জন্মের মত জীবনের সুখ
মর্ম্মভেদী যন্ত্রণায় হইয়া অধীর
<নিশীথে> {একেলা} হা— হাহা করি বেড়ায় ভ্রমিয়া
জোছনায় ঘুমাইছে অরণ্য কুটীর;
বিষণ্ণ নলিনী বালা শূন্য নেত্র মেলি
চাঁদের মুখের পানে রয়েছে চাহিয়া
<জানি না কেমন কোরে, বালার «+++»
সহসা কেমন ধারা লেগেছে আঘাত—
প্রেমেযে আঘাত লাগে, সামান্য হোলে ও অহি>

**২৫

*মালতী পুঁথি
*পার কি বলিতে কেহ

পারকি বলিতে কেহ কি হ’ল এ বুকে
যখনি শুনি গো ধীর সঙ্গীতের ধ্বনি
যখনি দেখি গো ধীর প্রশান্ত রজনী
কত কি যে কথা আর কত কি যে ভাব
উচ্ছ্বসিয়া উথলিয়া আলোড়িয়া উঠে
দূরাগত রাখালের বাঁশরীর মত
আধভোলা কালিকার স্বপ্নের মতন—
কি যে কথা কি যে ভাব ধরি ধরি করি
তবুও কেমন ধারা পারিনা ধরিতে!
কি করি পাইনা খুঁজি পাইনা ভাবিয়া,
ইচ্ছা করে ভেঙ্গে চুরে প্রাণের ভিতর
যা’ কিছু যুঝিছে হৃদে খুলে ফেলি তাহা।

**২৬

*কবি কাহিনী
চতুর্থ সর্গ

<«+++» কারাগারে ঘেরিয়া চৌদিকে,
«+++»গ্নি কুণ্ড <তব> {মম} জলদগ্নি ময়,
«+++»স অনলের নাহিক আলোক>
«+++» রাখাল তব সরস বাঁশরী
«+++» মনের সাধে প্রমোদের গান,
«+++» মেলিয়া যবে গাইতেছে গীত
«+++» ঘেরিয়া যবে বহিতেছে বায়ু
«+++»কা ময় যবে ফুটিয়াছে ফুল
«+++» তোদের আর কিসের ভাবনা?
«+++» চিরহাস্য ময় প্রকৃতির মুখ
«দি»বা নিশি হাসিবারে শিখেছিস তোরা,
সমস্ত প্রকৃতি যবে থাকে গো হাসিতে
সমস্ত জগৎ যবে গাহেগো সঙ্গীত
তখন ত তোরা <+++> {নিজ} বিজন কুটীরে
ক্ষুদ্র তম আপনার মনের বিষাদে
«স»মস্ত জগৎ ভূলি কাঁদিস্ না বসি,
জগতের, প্রকৃতির ফুল্ল মুখ দেখি
আপনার ক্ষুদ্র দুঃখ থাকে কি গো আর!
ধীরে ধীরে দূর হোতে আসিছে কেমন,
«স্ত»ব্ধ নভস্তল ভেদি সরল রাগিণী
«একে»ক রাগিণী আছে করিলে শ্রবণ
«+++» হয় আমারি তা’ প্রাণের রাগিণী,
«+++» রাগিণীর মত আমার এ প্রাণ,
আমার প্রাণের মত যেন সে রাগিণী!
কখনো বা মনে হয় পুরাতন কাল
«+++» রাগিণীর মত আছিল মধুর
এমনি স্বপন ময় এমনি অস্ফুট,
তাই শুনি ধীরে ধীরে পুরাতন স্মৃতি
প্রাণের ভিতরে যেন উথলিয়া উঠে।

**২৭

«+++»ষ্যৎ ক্রমে হইতেছে বর্ত্তমান
বর্ত্তমান ধীরে ধীরে মিশিছে অতীতে।
অস্ত যাইতেছে নিশি আসিছে দিবস,
দিবস নিশার ক্রোড়ে পড়িছে ঘুমায়ে।
এই সময়ের চক্রে ঘুরিয়া নীরবে
পৃথিবীরে— মানুষেরে অলক্ষিত ভাবে
পরিবর্ত্তনের পথে যেতেছে লইয়া
কিন্তু মনে হয় এই হিমাদ্রির বুকে
তাহার চরণ চিহ্ণ পড়িছেনা যেন।
কিন্তু মনে হয় যেন আমার হৃদয়ে
<+++ ক্ষমতাশালী>
দুর্দ্দান্ত ক্ষমতাশালী সময় সেও গো,
নূতন গড়েনি কিছু, ভাঙ্গেনি পুরাণো
বাহিরের কত কি যে <হানিল> ভাঙ্গিল চূরিল
বাহিরের কত কি যে হইল নূতন
কিন্তু ভিতরের দিকে চেয়ে দেখ দেখি
আগেও আছিল যাহা এখনো তা আছে
বোধ হয় চিরকাল থাকিবে তাহাই
বরষে বরষে দেহ ভাঙ্গিয়া যেতেছে
কিন্তু মন আছে তবু তেমনি অটল।
নলিনী নাইক বটে পৃথিবীতে আর
নলিনীরে তেমনিই ভালবাসি তবু,—
যখন নলিনী ছিল, তখন যেমন
তার হৃদয়ের মূর্ত্তি ছিল এ হৃদয়ে
এখনো তেমনি তাহা রয়েছে স্থাপিত।
এমন অন্তরে তারে রেখেছি লুকায়ে
মরমের মর্ম্মস্থলে করিতেছি পূজা,
সময় পারেনা সেথা কঠিন আঘাতে
ভাঙ্গিবারে এজনমে সে মোর প্রতিমা,
হৃদয়ের আদরের লুকান সে ধন!
ভেবেছিনু একবার এই যে <হৃদয়> {বিষাদ}
নিদারুণ তীব্র স্রোতে বহিছে হৃদয়ে
এ বুঝি হৃদয় মোর ভাঙ্গিবে চূরিবে
পারেনি ভাঙ্গিতে কিন্তু এক তিল তাহা
যেমন আছিল হৃদি তেমনি রোয়েছে।
<+++ বিহগ তব প্রমোদের পানে
এমনি হৃদয়ে তার হবে প্রতিধ্বনি।>
বিষাদ যুঝিয়াছিল প্রাণ পণে বটে
কিন্তু এ হৃদয়ে মোর কি যে আছে বল
<+++>
এ দারুণ সমরে সে হইয়াছে জয়ী—
গাও গো বিহগ তব প্রমোদের গান
তেমনি হৃদয়ে তার হবে প্রতিধ্বনি,
প্রকৃতি! মাতার মত সুপ্রসন্ন দৃষ্টি
যেমন দেখিয়াছিনু ছেলে বেলা আমি
এখনো তেমনি যেন পেতেছি দেখিতে?
যা কিছু সুন্দর দেবি তাহাই মঙ্গল—
তোমার সুন্দর রাজ্যে হে প্রকৃতি দেবী
«+++» অমঙ্গল কভু পারে না ঘটিতে।
«+++» সুন্দর <+++> {আহা} নলিনীর মন
«+++» সৌন্দর্য্য <+++> দেবী; তোমার এ রাজ্যে
«+++»লের তরে «+++» বিলীন।
«+++» দিয়াছ হৃদে «+++»
«+++»
তোমার আশ্বাস বাক্যে হে প্রকৃতি দেবি
সংশয় কখনো আমি করিনা স্বপনে
কি সঙ্গীত শিখায়েছ আশারে হে দেবি
সে গীতে হৃদয় মোর হোয়েছে বিলীন!
পৃথিবীতে এক+++ যাকে দুই হোয়ে নারী<+++>
শরীরের ব্যবধানে, স্বর্গে গিয়া তারা
একত্রে মিলিয়া যায় জেনেছি নিশ্চয়।
ক্রমে কবি যৌবনের সীমা ছাড়াইয়া
গম্ভীর বার্দ্ধক্যে আসি হোল উপনীত!
সুগম্ভীর বৃদ্ধ কবি, স্কন্ধে আসি তার
পড়েছে ধবল জটা অযত্নে লুটায়ে—
<গম্ভীর মুখশ্রী তার +++>
মনে হত দেখিলে সে গম্ভীর মুখশ্রী
হিমাদ্রি হতেও বুঝি সমুচ্চ মহান্।
নেত্র তাঁর বিকীরিত কি স্বর্গীয় জ্যোতি
যেন তাঁর নয়নের শান্ত সে কিরণ
সমস্ত পৃথিবীময় শান্তি বরষিবে।
বিস্তীর্ণ হইয়া গেল কবির সে দৃষ্টি—
দৃষ্টির সম্মুখে তার দিগন্তও যেন
খুলিয়া দিত গো তার অভেদ্য দুয়ার!
যেন কোন দেববালা কবিরে লইয়া
অনন্ত নক্ষত্র লোকে কোরেছে স্থাপিত
সামান্য মানুষ যেথা করিলে গমন
কহিত কাতর স্বরে নয়ন ঢাকিয়া—
“একিরে অনন্ত কাণ্ড মরিযে তরাসে—
কোথা ওগো সুরবালা, অনন্ত জগতে
আনিয়া কি খেলা খেল লয়ে ক্ষুদ্র মন
জ্ঞান হোল অবসন্ন, পরান অবশ
কোথায় ঢাকিব দেবি এ সঙ্কীর্ণ <+++> দৃষ্টি
কোথায় লুকাব দেবি এ সঙ্কীর্ন মন।”
***
সন্ধ্যার আঁধারে হোথা বসিয়া বসিয়া
কি গান গাইছে কবি শুনগো কল্পনা!
<“>কি সুন্দর সাজিয়াছে ওগো হিমালয়!
তোমার বিশাল তম শিখরের শিরে—
একটি সন্ধ্যার তারা! সুনীল গগন
ভেদিয়া তুষার শুভ্র মস্তক তোমার!
সরল পাদপ রাজি আঁধার করিয়া
উঠেছে তাহার পরে; সে ঘোর অটবী
ঘেরিয়া হুহুহু করি তীব্র গাঢ় বায়ু
দিবা নিশি ফেলিতেছে বিষন্ন নিশ্বাস!
শিখরে শিখরে ক্রমে নিভিয়া আসিল
অস্তমান তপনের আরক্ত কিরণে
প্রদীপ্ত জলদ চূর্ণ। শিখরে শিখরে
মলিন হইয়া এল উজ্জ্বল তুষার,
শিখরে শিখরে ক্রমে নামিয়া আসিল
আঁধারের যবনিকা ধীরে ধীরে ধীরে।
পর্ব্বতের বনে বনে গাঢ়তর হোলো
ঘুমময় অন্ধকার। গভীর নীরব!
«+++»

**২৮

«+++» ভয়ে ভয়ে যেন চলেছে তটিনী
সুগম্ভীর পর্ব্বতের পদতল দিয়া!
কি মহান্! কি নীরব! কি গম্ভীর ভাব!
ধরার সকল হোতে উপরে উঠিয়া
স্বর্গের সীমায় রাখি, ধবল জটায়
জড়িত মস্তক তব ওগো হিমালয়
«নী»রব ভাষায় তুমি কি যেন একটি
গম্ভীর আদেশ ধীরে করিছ প্রচার;
সমস্ত পৃথিবী তাই নীরব হইয়া
শুনিছে অনন্য মনে সভয়ে বিস্ময়ে!
«+++»রর নগর গ্রাম নিষ্পন্দ কানন!
«+++» ও একাকী হেথা রয়েছি পড়িয়া
«+++» মহাসমুদ্রে গিয়াছি মিশায়ে
ক্ষুদ্র <স্ফু> হোতে ক্ষুদ্র নর আমি শৈলরাজ!
অকূল সমুদ্রে ক্ষুদ্র তৃণটির মত
হারাইয়া দিগ্বিদিক, হারাইয়া পথ,
সভয়ে বিষ্ময়ে হোয়ে হত জ্ঞান প্রায়
তোমার চরণতলে রয়েছি পড়িয়া!
ঊর্দ্ধমুখে চেয়ে দেখি ভেদিয়া আঁধার
শূন্যে শূন্যে শত শত উজ্জ্বল তারকা
অনিমিখ নত নেত্র মেলিয়া যেনরে
আমারি মুখের পানে রয়েছে চাহিয়া!
অযুত তারকা +++! শুনগো তোমরা
একদৃষ্টে চাহিওনা অমন করিয়া
আমার মুখের পানে লক্ষ নেত্র মেলি!
অন্ধকার ভেদী ওই দৃষ্টি তোমাদের
দেখিলে হৃদয় যায় সঙ্কুচিত হোয়ে
সরমের মর্ম্মস্থল উঠে গো কাঁপিয়া!
ওদিকে সুদুর শৈলে ঝরিছে নির্ঝর
মৃদু ঝর ঝর ধ্বনি পশিছে মরমে,
হে নির্ঝর! ও কি গান গাইতেছ তুমি?
ও গান গেওনা আমি করি গো বারণ!
একাকী গভীরতম নীরব নিশীথে
যখনি শুনি গো ঐ মৃদু ঝর ঝর,
হুহু কোরে উঠে প্রাণ +++ মর্ম্মেতে
আকুলিয়া উঠে যেন কি যেন কি ভাবি;
বুকের ভিতরকার কথাগুলি যেন
বাহির হইয়া পড়ে শুনিলে সে ধ্বনি!
ওগো হিমালয়! তুমি কি গম্ভীর ভাবে
দাঁড়ায়ে রয়েছ হেথা অচল অটল!
«+++» ঝটিকা ঝঞ্ঝা বিদ্যুৎ অশনি
«+++» বুকের পরে কোরেছে আঘাত,
«+++» দিয়াছে পোড়ে প্রকাণ্ড প্রস্তর
«+++»ড়ছে কত তুষারের স্তূপ।
«+++» যেন মহর্ষির মত
«+++»

দেখিছ কালের লীলা করিছ গণনা
কাল চক্র কতবার আইল ফিরিয়া—
সিন্ধুর বেলার বক্ষে গড়ায় যেমন
অযুত তরঙ্গ কিছু লক্ষ্য না করিয়া!
কত কাল আইলরে গেল কতকাল
হিমাদ্রি গিরির ওই চক্ষের উপরি।
মাথার উপর দিয়া কত দিবাকর
উলটি কালের পৃষ্ঠা গিয়াছে চলিয়া
গম্ভীর আঁধারে ঢাকি <শৈল +++> {তোমার ও দেহ}
কত রাত্রি আসিয়াছে গিয়াছে পোহায়ে
কিন্তু বল <+++> দেখি ওগো হিমালয় গিরি!
মানুষ সৃষ্টির অতি আরম্ভ হইতে
কি দেখিছ এইখানে দাঁড়ায়ে দাঁড়ায়ে—
যা দেখিছ— যা’ দেখেছ তাতে কি এখনো
সর্ব্বাঙ্গ তোমার গিরি উঠেনি শিহরি?
কি দারুণ অশান্তি এ মনুষ্য জগতে
রক্তপাত— অত্যাচার— ঘোর কোলাহল—
দিতেছে মানব মনে বিষ মিশাইয়া!
কত কোটি কোটি লোক অন্ধকারাগারে—
অধীনতা শৃঙ্খলেতে আবদ্ধ হইয়া
ভরিছে স্বর্গের কর্ণ কাতর ক্রন্দনে
অবশেষে মন এত হোয়েছে নিস্তেজ
কলঙ্ক শৃঙ্খল তার অলঙ্কার রূপে
আলিঙ্গন কোরে তারে রেখেছে গলায়।
দাসত্বের পদধূলি অহঙ্কার কোরে
মাথায় বহন করে পর প্রত্যাশীরা
যে পদ মাথায় করে ঘৃণার আঘাত
সেই পদ ভক্তিভরে করে গো চুম্বন!
যে হস্ত ভ্রাতারে তার পরায় শৃঙ্খল
সেই হস্ত পরশিলে স্বর্গ পায় করে।
স্বাধীন, সে অধীনেরে দলিবার তরে,
অধীন, সে স্বাধীনেরে পূজিবারে শুধু!
সবল, সে দুর্ব্বলেরে পীড়িতে কেবল,
দুর্ব্বল, বলের পদে, আত্ম বিসর্জ্জিতে!
স্বাধীনতা কারে বলে জানে যেই জন
কোথায় সেই অসহায় অধীন জনের
কঠিন শৃঙ্খলরাশি দিবে গো ভাঙ্গিয়া
না— তার স্বাধীন হস্ত হোয়েছে কেবল
অধীনের লৌহ পাশ দৃঢ় করিবারে।
সবল <+++ দুর্বল হীনবল> {দুর্ব্বলে কোথা} সাহায্য করিবে—
দুর্ব্বলে অধিকতর করিতে দুর্ব্বল
<তার> বল তার— হিমালয় দেখিছ কি তাহা?
সামান্য <কি +++> নিজের স্বার্থ করিতে সাধন
কত দেশ করিতেছে শ্মশান অরণ্য!
কোটি কোটি মানবের শান্তি স্বাধীনতা
রক্তময় পদাঘাতে দিতেছে ভাঙ্গিয়া!
তবুও মানুষ বলি গর্ব্ব করে তারা,
«+++»

**২৯

«ক»ত রক্তমাখা ছুরি হাসিছে হরষে
কত জিহ্বা হৃদয়েরে ছিঁড়িছে খুঁড়িছে!
বিষাদের অশ্রুপূর্ণ নয়ন হে গিরি<—>{!}
অভিশাপ দেয় সদা পরের হরষে—
<+++> উপেক্ষা ঘৃণায় মাখা কুঞ্চিত অধর
পর অশ্রুজলে ঢালে হাসিমাখা বিষ!
পৃথিবী জানেনা গিরি!— হেরিয়া পরের জ্বালা
হেরিয়া পরের মর্ম্ম দুখের উচ্ছ্বাস
পরের নয়ন জলে, মিশাতে নয়ন জল
পরের দুখের শ্বাসে মিশাতে নিশ্বাস!
প্রেম? প্রেম কোথা হেথা এ অশান্তি ধামে?
প্রণয়ের ছদ্মবেশ পরিয়া যেথায়
বিচরে ইন্দ্রিয় সেবা— প্রেম সেথা আছে?
প্রেমে পাপ বলে যারা প্রেম তারা চিনে?
মানুষে মানুষে যেথা আকাশ পাতাল
হৃদয়ে হৃদয়ে <সে>{যে}থা আত্ম অভিমান,
যে ধরায় মন দিয়া ভাল বাসে যারা,
উপেক্ষা বিদ্বেষ <+++> ঘৃণা {মিথ্যা} অপবাদে
তারাই অধিক সহে বিষাদ যন্ত্রণা,
সেথা যদি প্রেম থাকে তবে কোথা নাই?
তবে প্রেম কলুষিত নরকেও আছে!
কেহবা <+++> রতন-ময় কনক ভবনে
ঘুমায়ে রয়েছে সুখে বিলাসের কোলে
অথচ সুমুখ দিয়া দীন নিরালয়
পথে ২ করিতেছে ভিক্ষান্ন সন্ধান!
সহস্র পীড়িতদের অভিশাপ লয়ে
সহস্রের রক্ত ধারে ক্ষালিত আসনে
সমস্ত <রাজা> পৃথিবী, রাজা করিছে শাসন
বাঁধিয়া গলায় সেই শাসনের রজ্জু
সমস্ত পৃথিবী তার রহিয়াছে দাস!
সহস্র পীড়ন সহি আনত মাথায়
একের দাসত্বে রত অযুত মানব!
ভাবিয়া দেখিলে মন উঠেগো শিহরি,
ভ্রমান্ধ দাসের জাতি সমস্ত মানুষ!
এ অশান্তি কবে দেব! হবে দূরীভূত?
অত্যাচার গুরু ভারে হোয়ে নিপীড়িত
সমস্ত পৃথিবী দেব! করিছে ক্রন্দন
সুখ শান্তি সেথা হোতে লয়েছে বিদায়!
কবে দেব এ <অশান্তি> রজনী হবে অবসান?
কবে {এ} আঁধার ভার করিয়া নিক্ষেপ
স্নান করি প্রভাতের শিশির সলিলে
তরুণ রবির করে হাসিবে পৃথিবী!
«অ»যুত মানব গণ এ{ক}কণ্ঠে দেব
«+++» গান গাইবেক স্বর্গ পূর্ণ করি!
«+++»রিদ্র ধনী, অধিপতি প্রজা,
«+++» কুটীরেতে করিতে গমন
«+++»মান করিবেনা মনে।
«+++» করিতেছে সেবা,
«+++»হে কারো দাস!
নাই ভিন্ন জাতি আর নাই ভিন্ন ভাষা
নাই ভিন্ন দেশ, ভিন্ন আচার ব্যাভার!
সকলেই আপনার আপনার লোয়ে
পরিশ্রম করিতেছে প্রফুল্ল অন্তরে
কেহ কারো সুখে নাই দেয় গো কণ্টক
কেহ কারো দুখে নাহি করে উপহাস—
<+++ আবরণে নাহি>
দ্বেষ, নিন্দা, ক্ররতার জঘন্য আসন
ধর্ম্ম আবরণে নাহি করেগো সজ্জিত!
<ওগো হিমালয়>
হিমাদ্রি! মানুষ-সৃষ্টি আরম্ভ হইতে
অতীতের ইতিহাস পড়েছ সকলি—
অতীতের দীপশিখা যদি হিমালয়
ভবিষ্যৎ অন্ধকার পারেগো ভেদিতে
বল তবে কবে গিরি হবে সেই দিন
যে দিন স্বর্গই হবে পৃথ্বীর আদর্শ!
সে দিন আসিবে গিরি! এখনই যেন
দূর ভবিষ্যৎ <+++> «+++» পেতেছি দেখিতে!
যেই দিন এক প্রেমে হইয়া নিবদ্ধ
মিলিবেক কোটি কোটি মানব হৃদয়!
প্রকৃতির সব কার্য্য অতি ধীরে ধীরে।
এক এক শতাব্দীর সোপানে সোপানে
পৃথ্বী সে শান্তির পথে চলিতেছে ক্রমে
পৃথিবীর সে অবস্থা আ<সি>{সে} নি এখনো
কিন্তু এক দিন তাহা আসিবে নিশ্চয়।
আবার বলিগো আমি হে প্রকৃতি দেবি
যে আশা দিয়াছ হৃদে ফলিবেক তাহা,
এক দিন মিলিবেক হৃদয়ে হৃদয়।
এ যে সুখময় আশা দিয়াছ হৃদয়ে
ইহার সঙ্গীত দেবি, শুনিতে শুনিতে
পারিব হরষ চিতে ত্যজিতে জীবন!”
সমস্ত ধরার তরে নয়নের জল
বৃদ্ধ সে কবির নেত্র করিল পূর্ণিত!
যথা সে হিমাদ্রি হোতে ঝরিয়া ঝরিয়া
কত নদী শত দেশ কর গো উর্ব্বরা।
উচ্ছ্বসিত করি দিয়া কবির হৃদয়
সমস্ত পৃথিবী ময় পোড়েছে ছড়ায়ে
<কবির> {অসীম} করুণা সিন্ধু। মিলি তাঁর সাথে—
জীবনের <+++> একমাত্র সঙ্গিনী {ভারতী}
কাঁদিলেন আর্দ্র হোয়ে পৃথিবীর <+++> দুখে
«+++» নিপতিত পক্ষীর মরণে
«+++»থে যিনি করেন রোদন!
«+++» প্রকৃতির শোভা
«+++»লি পুরাণো
«+++» গহ্বরে
«+++»
«+++»শ্রু—

**৩০

«+++» হিমাদ্রির নিশীথ বায়ুতে
«+++»র অন্তিম শ্বাস গেল মিশাইয়া!
হিমাদ্রি হইল তার সমাধি মন্দির,
«এ»কটি মানুষ সেথা ফেলেনি নিশ্বাস,
প্রত্যহ প্রভাত শুধু শিশিরাশ্রু জলে
«হ»রিত পল্লব সেথা করিত প্লাবিত
শুধু সে বনের মাঝে বনের বাতাস
হুহু করি মাঝে ২ ফেলিত নিশ্বাস!
সমাধি উপরে তার <শুধু গাছ পালা> {তরু লতা কুল}
প্রতি দিন বরষিত কত শত ফুল
কাছে বসি বিহগেরা গাইত গো গান
তটিনী তাহার সাথে মিশাইত তান!
কবির অন্তিম শয্যা-শিয়রের কাছে
কানন সৃজিত হল লতা গুল্ম গাছে!
আজিও তটিনী সেথা যায়গো বহিয়া
বাতাস কতকি কথা যায়গো কহিয়া।

১২ই <আশ্বিন> {কার্ত্তিক} শনিবার
<৪ দিন লিখি নাই।>

**৩০

*মালতী পুঁথি
*পাষাণ-হৃদয়ে কেন সঁপিনু হৃদয়

শনিবার অগ্রহায়ন ১৮৭৭

পাষাণ হৃদয়ে কেন সঁপিনু হৃদয়?
মর্মভেদী যন্ত্রণায়, ফিরেও যে নাহি চায়
বুক ফেটে গেলেও যে কথা নাহি কয়
প্রাণ দিয়ে সাধিলেও, পায়ে ধরে কাঁদিলেও
এক তিল একবিন্দু দয়া নাহি হয়
হেরিলে <যে>{গো} অশ্রুরাশি বরষে ঘৃণার হাসি,
বিরক্তির তিরষ্কার তীব্র বিষময়।
এত যদি ছিল মনে তবে বল কি কারণে
একদিন তুলেছিল স্বর্গের আলয়
একদিন স্নেহ ভরে, মাথা রাখি কোলপরে
কেন নিয়েছিল হরে পরান হৃদয়
ভগ্ন বুকে কেন আর, বজ্র হানে বারবার
মনখানা নিয়ে যেন করে ছেলেখেলা—
গিয়াছে যা ভেঙ্গেচূরে, আর কেন তার পরে
মিছামিছি বিঁধে আহা বাণ বিষময়!

**৩০

*গীতবিতান
*প্রেম ও প্রকৃতি ২৩

ওকি সখি কেন করিতেছ তি«+++»
একটু বিরলে বসি, কাঁদিতে «+++»
তাতে ও কি আমি «+++»
ভুলিনি তোমারে <+++> {আমি} «+++»
+++ ঢালি «+++»
তবে আর কেন «+++»
«+++»
পথের পথিক এসে, সেওগো যাইবে কেঁদে
তবুও অটল রবে হৃদয় তোমার।

**৩০

*মালতী পুঁথি
*ভেবেছি কাহারো সাথে

ভেবেছি কাহারো সাথে মিশিব না আর
কারো কাছে বর্ষিব না অশ্রুবারি ধার।
মানুষ পরের দুখে, করে শুধু উপহাস
জেনেছি, দেখেছি তাহা শত শত বার
যাহাদের মুখ আহা একটু মলিন হোলে
যন্ত্রণায় ফেটে যায় হৃদয় আমার
তারাই— ২ যদি, এত গো নিষ্ঠুর হোল
তবে আমি হতভাগ্য কি করিব আর!
সত্য তুমি হও সাক্ষী, ধর্ম তুমি জেনো ইহা
ঈশ্বর! তুমিই শুন প্রতিজ্ঞা আমার
<+++>
যার তরে কেঁদে মরি, সেই যদি উপহাসে
তবে মানুষের সাথে মিশিব না আর।

**৩০

*মালতী পুঁথি
*হা রে বিধি কী দারুণ অদৃষ্ট আমার

হারে বিধি কি দারুণ অদৃষ্ট আমার
যারে যত ভালবাসি, যার তরে কাঁদে প্রাণ
হৃদয়ে আঘাত দেয় সেই বারে বার—
যারে আমি বন্ধু বলি, করিয়াছি আলিঙ্গন
সেই এ হৃদয় করিয়াছে চূর মার
যারেই বেসেছি ভাল, সেই চিরকাল তরে
পৃথিবীর কাছে দুঃখ পেয়েছে অপার।
হান বিধি হান বজ্র, আমার এ ভগ্ন হৃদে
তিলেক বাঁচিতে নাই বাসনা আমার
প্রস্তরে গঠিত এই, হৃদয় বিহীন ধরা—
হেথা কত কাল বল বেঁচে রব আর

**৩১-৩৪

*তুকারাম-এর অভঙ্গ-র অনুবাদ

**৩৫

*শৈশব সঙ্গীত
*ফুলবালা

*৫০ক*
দেখে যা— ২ ২ লো {তোরা} সাধের কাননে মোর <+++>
<ফুটেছে আমার সাধের কুসুম>
(আমার) সাধের কুসুম উঠেছে ফুটিয়া
মলয় বহিছে হরষে ছুটিয়া রে—
(সেথা) জ্যোছনা ফুটে
তটিনী <ছুটে> {লুটে}
প্রমোদে কান<নে>{ন} ভোর!
এস এস সখা এস {গো} হেথা
দুজনে কহিব মনের <ব্যথা> {কথা}
তুলিব কুসুম দুজনে মিলিরে
(সুখে) গাঁথিব মালা
গণিব তারা
করিব রজনী ভোর!
এ কাননে বসি গাহিব গান
সুখের স্বপনে কাটাব প্রাণ—
খেলিব দুজনে মনেরি খেলা রে—
৲(মোদের) রহিবে প্রাণে৲
৴দিবস নিশি৴
আধ আধ ঘুম ঘোর!

**৩৫

*গীতবিতান
*ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী ১২

<কত দুখ যাতন # শ্যাম সহনুরে>
গহির নীদমে অবশ শ্যাম মম
অধরে বিকশত হাস—
মধুর বদনমে— মধুর ভাব অতি
কয়্‌স পায় পরকাশ!
চুম্বনু শত শত— চন্দ্র বদন রে—
তব হুঁ ন পূরল আশ!
অতি ধীরে ময় <তরাস> {হৃদয়} রাখনু
তব হুঁ ন মিটল তিয়াষ!
শ্যাম সুখে তুঁহু নীদ যাও পহু—
ম<ঝু>{ম} এ প্রে<মের>{ম} ময় উরষে—
অনিমিখ নয়নে সারা রজনী
হেরব মুখ তব হরষে
শ্যাম! মুখে তব— মধুর অধরমে
হাস বিকাশত কায়—
কোন্ স্বপন অব দেখত মাধব<?>{—}
কহবে কোন্ হমায়?
এ সুখ-স্বপনে ময় <+++> কি দেখত,
হরষে বিকশত হাসি?
শ্যাম— শ্যাম মম— কয়সে শোধব
তুঁহুক প্রেমঋণ রাশি<!>{?}
জনম ২ মম— প্রাণ পূর্ণ করি
থাক’ হৃদয় করি আলা—
তুঁহুক পাশ রহি— হাসত হাসত,
সহব সকল দুখ জ্বালা!
বিহঙ্গ কাহ তু বোলন লাগলি?
শ্যাম ঘুমায় হমারা!
রহ— রহ চন্দ্রম, ঢাল ঢাল তব
শীতল জোছন ধারা!
তারা-মালিনী— মধুর যামিনী
নযাও— ন যাও বালা
<নিঠুর উষা তব> {নিরদয় রবি} অব কাহ তু আ<ও>{য়}লি?
সঁপিতে বিরহক জ্বালা!
হমার সারা জীবন <রহত> জনি কভু
রজনী রহত সমান
হেরই হেরই শ্যাম মুখচ্ছবি
প্রাণ ভইত অবসান!
ভানু কহত অব— “রবি অতি নিষ্ঠুর—
নলিন-মিলন অভিলাষে—
কত শত নারী«+++» মিলন টুটাওত
ডা«+++»

**৩৬

*সাহিত্য
*স্যাক্‌সন জাতি ও অ্যাংলো স্যাক্‌সন সাহিত্য

ভয়ে তাহাদের হৃদি হইল আকুল— # মৃত্যু হেরি সমুদ্র করিল আর্তনাদ!
পর্ব্বত-শিখর রক্তে হইল রঞ্জিত— # সিন্ধু রক্তময় ফেন করিল উদ্গার!
উঠিল মৃত্যু-আঁধার— গর্জ্জিল তরঙ্গ— # পলালো ইজিপ্টগণ ভয়ে কম্পাণ্বিত!
*** # ধাইয়া তাদের পানে লুটায়ে পড়িল
সমুদ্র-তরঙ্গ-রাশি মেঘের মতন— # গৃহে আর কাহারেও হলনা ফিরিতে!
যেথা যায় সে<ই>খানেই উন্মত্ত জলধি— # বিনষ্ট হইয়া গেল বল তাহাদের—
উঠিল ঝটিকাঘোর আকাশ ব্যপিয়া— # শত্রুদল করিল দারুণ <সিংহনাদ> {চীৎকার}
মুমূর্ষুর স্বরে বায়ু হল ঘনীভূত।

কেনবা সেবিব তাঁরে প্রসাদের তরে? # কেন তাঁর কাছে হব দাসত্বে বিনত?
তাঁর মত আমিও ত বিধি হোতে পরি! # তবে— শুন— শুন সবে বীর সঙ্গীগণ—
তোমরা সকলে মোর কর সহায়তা— # <এ<+++> নিগ্রহে> তা<হা> হোলে {এ যুদ্ধে মোরা} লভিব বিজয়!
সুবিখ্যাত, সুদৃঢ়-প্রকৃতি বীরগণ— # আমারেই <+++> {রাজা} বোলে কোরেছে গ্রহন
সুযুক্তি দিবার যোগ্য ইহারাই সবে— # যুঝিব ঈশ্বর সাথে ইহাদেরি লোয়ে!
*** # ইহাদেরি রাজা হোয়ে শাসিব এ দেশ
তবে কি কারণে হব তাঁহার অধীন? # কখনো— কখনো তাঁর হইব না দাস!

উচ্চ স্বর্গধামে মোরে করিলেন দান, # ঈশ্বর যে সুখ-ভূমি, সে স্থানের সাথে
এ সঙ্কীর্ণ আবাসের কি ঘোর প্রভেদ! # যদি কিছুক্ষণ তরে পাইগো ক্ষমতা—
এক শীত ঋতু তরে— হই মুক্ত যদি— # তাহা হোলে সঙ্গীগণ লোয়ে— কিন্তু হায়
চারিদিকে রহিয়াছে লৌহের বাঁধন! # এই ঘোর নরকের দৃঢ়-মুষ্টি মাঝে
কি দারুণ রূপে আমি রোয়েছি আবদ্ধ! # উর্দ্ধে নিম্নে জ্বলিতেছে বিশাল অনল—
এমন জঘন্য দৃশ্য দেখিনি কখনো! # চির প্রজ্জ্বলিত অগ্নি নিভেনা+++তে!

**৩৭

*সাহিত্য
*স্যাক্‌সন জাতি ও অ্যাংলো স্যাক্‌সন সাহিত্য

গুহা-অন্ধকার ছাড়া ছিল না কিছুই—
এ মহা-অতলস্পর্শ— আঁধার— গভীর—
আছিল দাঁড়ায়ে শুধু শূন্য ও নিষ্ফল।
উন্নত ঈশ্বর তবে দেখিলা <চে>{চা}হিয়া
এই নিরানন্দ স্থান! দেখিলা হেথায়
অন্ধকার, বিষণ্ণ ও শূন্য মেঘরাশি
রহিয়াছে, চিরস্থির নিশীথিনী লোয়ে!
উত্থিত হইল সৃষ্টি ঈশ্বরের বাক্যে।
<+++> মহান ক্ষমতা-বলে অনন্ত-ঈশ্বর
প্রথমে পৃথ্বী ও স্বর্গ করিলা সৃজন।
নির্ম্মিলা আকাশ— আর এ বিস্তৃত ভূমি
সর্ব্বশক্তিমান প্রভু করিলা স্থাপন!
পৃথিবী তরুণ-তৃণে ছিল না হরিৎ—
সমুদ্র চিরান্ধকারে আছিল আবৃত—
পথ ছিল সুদূর— বিস্তৃত অন্ধকার!
আদেশিলা মহাদেব জ্যোতিরা আসিতে
এ মহা আঁধার স্থানে। মুহূর্ত্তে অমনি
ইচ্ছা পূর্ণ হোল তাঁর। পবিত্র আলোক
এই মরুময় স্থানে পাইল প্রকাশ।

**৩৮

*মালতী পুঁথি
*এ হতভাগারে ভালো কে বাসিতে চায়

এ হতভাগারে ভাল কে বাসিতে চায়?
সুখ আশা থাকে যদি বেসোনা আমায়!
<+++> এ জীবন, অভাগার— <দুখের> নয়ন সলিল ধার
বল সখি কে সহিতে পারিবে তা হায়!
এ ভগ্ন প্রাণের অতি বিষাদের গান
বল সখি কে শুনিতে পারে সারা প্রাণ
গেছি ভূলে ভালবাসা— <ছে>{ছা}ড়িয়াছি সুখ আশা—
ভালবেসে কাজ নাই স্বজনি আমায়!

**৩৮

*?

±তারে দেহগো আনি±

**৩৮

*গীতবিতান
*প্রেম ও প্রকৃতি ২১

±একবার বল সখি ভালবাসমোরে
এ ভালবাসায় যদি
<কেমনে শুধিব বল> তোমার এ ঋণ±

**৩৮

*মালতী পুঁথি
*জানি সখা অভাগীরে ভালো তুমি বাস না

জানি সখা <কভু ছিল> {অভাগীরে} # ভাল তুমি বাসনা
ছেড়েছি ছেড়েছি <সখা> {নাথ} # তব প্রেম কামনা—
এক ভিক্ষা মাগি হায়— # নিরাশ কোরোনা তায়
শেষ ভিক্ষা শেষ আশা— # অন্তিম বাসনা—
এ জন্মের তরে সখা— # আরত হবেনা দেখা
তুমি সুখে থেকো নাথ # কি কহিব আর
একবার বোসো হেথা— # ভাল কোরে কও কথা
যে নামে ডাকিতে সখা # ডাকো একবার—
ওকি সখা কেঁদোনাকো— # দুখিনীর কথা রাখো
আমি গেলে বল নাথ— # কি <হবে তোমার?> {ক্ষতি তাহার?}
যাই সখা যাই তবে— # ছাড়ি তোমাদের সবে—
সময় আসিছে কাছে # বিদায় বিদায়—

**৩৮

*গীতবিতান
*প্রেম ও প্রকৃতি ২১

কেমনে শুধিব বল তোমার এ ঋণ
এদয়া তোমার মনে রবে চিরদিন
যবে এ হৃদয় মাঝে ছিলনা জীবন—
মনে হোত ধরা যেন মরুর মতন<।>{—}
সে হৃদে ঢালিয়া তব প্রেম বারি ধার
নূতন জীবন যেন করিলে সঞ্চার।—
একদিন এহৃদয়ে বাজিত প্রেমের <গীত> {গান}
কবিতায় কবিতায় পূর্ণ যেন ছিল প্রাণ
দিনে ২ সুখ গান থেমে গেল সে হৃদয়ে
নিশীথ শ্মশান সম আছিল নীরব হোয়ে
সহসা উঠেছে বাজি তব কর পর<+++>{শনে}
পুরাণো সকল ভাব জাগিয়া উঠেছে মনে
<বিরাজিছে> এ হৃদয়ে যেন নব উষাকাল
শূন্য হৃদয়ের যত <গিয়াছে> {ঘুচেছে} আঁধার জাল

**৩৯

*গীতবিতান
*নাট্যগীতি ৩২

ভাল যদি বাস সখি কি দিবগো আর
কবির হৃদয় এই দিব উপহার—
এত ভালবাসা সখি— কোন্ হৃদে বল দেখি
কোন্ হৃদে ফুটে এত ভাবের কুসুম ভার।
তাহোলে এ হৃদি ধামে— তোমারি— তোমারি নামে—
বাজিবে মধুর স্বরে হৃদয় বীণার তার—
যাকিছু গাহিব গান— ধ্বনিবে তোমারি নাম
কি আছে কবির বল কি তোমারে দিব আর?

**৩৯

*শৈশব সঙ্গীত
*ভগ্নতরী
*প্রথম সর্গ, গান

ওই কথা বল সখা বল আর বার
ভাল বাসো মোরে তাহা বল বার বার।
কতবার শুনিয়াছি— তবুগো আবার যাচি
ভাল বাসো মোরে তাহা বলগো আবার!

*৩৯

*মালতী পুঁথি
*ও কথা বোলো না সখি

ও কথা বোল না সখি— প্রাণে লাগে ব্যথা—
আমি <+++> ভাল বাসি নাকো এ কি রূপ কথা!
কিজানি কি মোর দশা কহিব কেমনে
প্রকাশ করিতে নারি রয়েছে যা মনে—
<তাই> পৃথিবী আমারে সখি চিনিল না তাই—
পৃথিবী না চিনে মোরে তাহে ক্ষতি নাই—
তুমিও কি বুঝিলেনা এ মর্ম কাহিনী
তুমিও কি চিনিলে না আমারে স্বজনি?

**৩৯

*গীতবিতান
*নাট্যগীতি ৬

কতদিন একসাথে ছিনু ঘুম ঘোরে
তবু জানিতাম নাকো ভাল বাসি তোরে—
<+++> মনে আছে কত খেলা— খেলিতাম ছেলেবেলা—
ফুল তুলিতাম মোরা দুইটি আঁচল ভোরে।
যতদিন ছিনু সুখে— দুই জনে বুকে বুকে
জানিতাম নাকো আমি ভালবাসি তোরে।
অবশেষে একপাল ভাঙ্গিল যখন
ছেলেবেলাকার যত ফুরাল স্বপন—
লইয়া দলিত মন হইনু প্রবাসী—
তখন জানিনু সখি তোরে ভালবাসি—

**৩৯

*মালতী পুঁথি
*কী হবে বলো গো সখি

কি হবে বল গো সখি ভাল বাসি অভাগারে
যদি ভালবেসে থাক ভূলে যাও একেবারে—
একদিন এ হৃদয়— আছিল কুসুমময়
চরাচর পূর্ণ ছিল সুখের অমৃত ধারে
সেদিন গিয়েছে সখি আর কিছু নাই
ভেঙ্গে পুড়ে সব যেন হোয়ে গেছে ছাই
হৃদয় কবরে শুধু মৃত ঘটনার—
«+++»য়েছে পোড়ে স্মৃতি নাম যার।

**৪০

*গীতবিতান
*প্রেম ও প্রকৃতি ৩৫

গা সখি গাইলি যদি আবার সে গান
কত দিন শুনি নাই ও পুরানো তান
<নির্ঝরের ঝরঝরে নদীর অস্ফুট স্বরে
+++ নিশীথ ভাবনায়>
কখনো কখনো যবে <একাকী> {নীরব} নিশীথে
একাকী রয়েছি বসি চিন্তামগ্ন চিতে
চমকি উঠিত প্রাণ— কে যেন গায় সে গান
দুই একটি কথা তার পেলেম শুনিতে।
হা হা সখি— সেদিনের সব কথা গুলি—
প্রাণের ভিতরে যেন উঠিছে আকুলি
যে দিন মরিব সখি, গাস্ ওই গান
শুনিতে শুনিতে যেন যায় এই প্রাণ রে

**৪০

*গীতবিতান
*প্রেম ও প্রকৃতি ৩১

সেই যদি সেই যদি # ভাঙ্গিল এ পোড়া হৃদি—
সেই যদি ছাড়াছাড়ি হোল দুজনায়—
একবার এস কাছে— # কি তাহাতে দোষ আছে
<একবার> জন্মশোধ দেখে নিয়ে লইব বিদায়!
সেই গান একবার গাও সখি— <গাও গান> <{সেই গান}> {শুনি}
যেই গান একসনে— # গাহিতাম দুই জনে—
<সেই গানে ছিল পূর্ণ দুজনের প্রাণ>
গাহিতে গাহিতে শেষে পোহাতো যামিনী
কত ভাল বাসিতাম শুনিতে সে গান—
একেলা মরমে মোরে— # রহিবো বিদেশে পোড়ে
ওই গান গেয়ে গেয়ে কাটাব পরাণ!
চলিনু— চলিনু তবে— # এ জন্মে কি দেখা হবে—?
এ জন্মের সুখ তবে হোল অবসান?
তবে সখি এস কাছে— # কি তাহাতে দোষ আছে?
আর বার গাও সখি পুরাণো সে গান!

**৪১

*শৈশব সঙ্গীত
*প্রতিশোধ

গভীর রজনী নীরব ধরণী।
মুমূর্ষু পিতার কাছে
বিজন আলয়ে আঁধার হৃদয়ে
বালক দাঁড়ায়ে আছে।
বীরের হৃদয়ে ছুরিকা বিঁধানো
শোণিত বহিয়ে যায়—
বীরের বিবর্ণ মুখের মাঝারে
রোষের অনল ভায়।
পোড়েছে দীপের <+++>অফুট আলোক
আঁধার মুখের পরে
সে মুখের পানে চাহিয়া বালক
দাঁড়ায়ে ভাবনা ভরে।
দেখিছে পিতার নীরব অধরে
যেন অভিশাপ লিখা—
স্ফুরিছে আঁধার নয়ন হইতে
হিংসার অনল শিখা!
ঘুম হোতে যেন চমকি উঠিল
সহসা নীরব <+++> ঘর
মুমূর্ষু কহিলা বালকে চাহিয়া
সুধীর গভীর স্বর।
“শোন্ তবে বৎস্— অধিক কি কব—
আসিছে মরণ বেলা—
এই শোণিতের প্রতিশোধ নিতে
করিস্ নে অবহেলা—”
এতেক বলিয়া টানি উপাড়িলা
ছুরিকা হৃদয় হোতে
ঝলকে <+++> ঝলকে উচ্ছ্বাস অমনি
শোণিত বহিল স্রোতে।
কহিলা— “এইনে— এইনে ছুরিকা—
তাহার উরস পরে—
যতদিন ইহা ঘুমাতে না পায়
থাকে যেন তোর করে
হা হা— ক্ষত্র দেব কি পাপ কোরেছি
এ তাপ সহিনু কাহে—
ঘুমাতে ঘুমাতে শয্যায় পড়িয়া
মরিতে হইল যাহে।
কুমার— কুমার— এইনে— এইনে
পিতার কৃপাণ তোর
এর অপমান করিস্‌নে যেন
এই শেষ কথা মোর।”
নয়নে জ্বলিল দ্বিগুণ আগুণ
কথা হোয়ে গেল রোধ
<+++> শোণিতে লিখিলা ভূমির উপরে
“প্রতিশোধ”— “প্রতিশোধ—”
«+++»
পিতার চরণ «+++»
ছুঁইয়া কৃপাণ খানি—
আকাশের পানে চাহিয়া কুমার
কহিলা প্রতিজ্ঞা বাণী
“ছুঁইনু কৃপাণ— প্রতিজ্ঞা করিনু
শুন ক্ষত্র-কুল প্রভু
এর প্রতিশোধ— তুলিব— তুলিব—
অন্যথা নহিবে <তার> {কভু!}
সেই বুক ছাড়া এ ছুরিকা আর
কোথা না বিশ্রাম পাবে
তার রক্ত ছাড়া এই ছুরিকার
তৃষা কভু নাহি যাবে।”
<পিতার> {রাখিলা} শোণিতে মাখা সে ছুরিকা
<রাখিলা> বুকের বসনে <যা> ঢাকি<—>{।}
ক্রমে <+++> {মুমূর্ষুর} ফুরাইল প্রাণ
<+++> মুদিয়া আইল আঁখি!

ভ্রমিছে কুমার— প্রতি দেশে দেশে
ঘুচাতে প্রতিজ্ঞা-ভার
দেশে দেশে— ভ্রমি তবুওত আজি
পেলেনা সন্ধান তার।
এখনো সে বুকে রোয়েছে ছুরিকা
প্রতিজ্ঞা জ্বলিছে প্রাণে
এখনো পিতার শেষ কথা গুলি
বাজিছে যেন সে কানে।
“কোথা যাও যুবা যেওনা যেওনা
গহন কানন ঘোর,
সাঁঝের আঁধার ঢাকিছে ধরণী
এসগো কুটীরে মোর!”
<চাহি না আমার— বিরা,— আলয়
+++ কুটীর স্বামী>
“ক্ষমগো আমারে কুটীর স্বামী
বিরাম আলয় চাইনা আমি
যে কাজের তরে ছেড়েছি আলয়
সে কাজ পালিব আগে।”
“শুন গো পথিক যেওনাকো আর
অতিথির তরে মুক্ত এ দুয়ার
দেখেছ চাহিয়া ছেয়েছে জলদ
পশ্চিম গগন ভাগে!”
কত না ঝটিকা বহিয়া গিয়াছে
মাথার উপর দিয়া
প্রতিজ্ঞা পালিতে চলেছে <পথিক> {তবুও}
যুবক নির্ভীক হিয়া।

**৪২

«+++»
«+++»হি মানি
বুকেতে রয়েছে ছুরিকা লুকানো
হৃদয়ে প্রতিজ্ঞাবাণী!
“গভীর আঁধারে নাহি পাই পথ
শুনগো কুটীর স্বামী
খুলে দাও দ্বার দাওগো আশ্রয়
এসেছি অতিথি আমি!”
ধীরে ধীরে ধীরে খুলিল দুয়ার
পথিক দেখিল চেয়ে
করুণার যেন প্রতিমার মত
একটি রূপসী মেয়ে।
এলোথেলো চুলে বনফুলমালা
<দে> দেহে এলোথেলো বাস—
নয়নে করুণা— অধরে মাখানো
কোমল সরল হাস।
বালিকার পিতা রয়েছে বসিয়া
পরণ আসন পরি—
সম্ভ্রমে আসন দিলেন পাতিয়া
পথিকে যতন করি।
দিবসের পর যেতেছে দিবস
যেতেছে বরষ মাস—
<পথিকের প>
আজিও কেন সে কানন কুটীরে
পথিক করিছে বাস?
কি কর যুবক— <ভুলিলে কি সব?> {ছাড় এ কুটীর}
সময় যেতেছে চলি
যে কাজের তরে ছেড়েছ আলয়
সে কাজ যেওনা ভূলি!
বালিকার সাথে বেড়ায় পথিক
<নদী গিরি বনে বনে> {বন-নদী-তীর পানে}
প্রেম গান গাহি প্রেমের প্রলাপ
কহি তার কানে কানে।
কহিত তাহারে সমর-কাহিনী
সভয়ে শুনিত বালা—
কাহিনী ফুরালে যতন করিয়া
গলায় পরাত মালা।
দিবসের পর যেতেছে দিবস
যেতেছে বরষ মাস
যুবার হৃদয়ে জড়ায়ে পড়িছে
ক্রমেই <প> প্রণয়-পাশ।
ক্রমশ যুবার ছুরিকা হইতে
রক্ত চিহ্ণ গেল ঘুচি
<রক্তাক্ষরে লিখা>
শোণিত লিখিত প্রতিজ্ঞা আখর
মন হোতে গেল মুছি।

মালতী বালার সাথে কুমারের
আজিকে বিবাহ হবে—
কানন <+++> আজিকে হতেছে ধ্বনিত
সুখের হরষ রবে।
মালতীর পিতা প্রতাপের দ্বারে
কানন বাসীরা যত
গাইছে নাচিছে হরষে সকল
যুবক রমণী শত।
কেহবা গাঁথিছে ফুলের মালিকা
<কেহবা> গাহিছে বনের গান
মালতীরে কেহ ফুলের ভূষণ
উপহার করে দান।
ফুলে ফুলে কিবা সেজেছে মালতি
এলায়ে কুন্তল রাশি
সুখের আভায় উজলে নয়ন
অধরে সুখের হাসি!
আইল কুমার বিবাহ সভায়
মালতীরে লয়ে সাথে
মালতীর হাত লইয়া প্রতাপ
সঁপিল যুবার হাতে।
ও কি ও— ও কি ও— সহসা প্রতাপ
বসনে নয়ন চাপি
মূরছি পড়িল ভূমির উপরে
থর থর করি কাঁপি
মালতী বালিকা পড়িল সহসা
মূরছি কাতর রবে!
বিবাহ সভায় যত ছিল লোক
ভয়ে পলাইল সবে!
সভয়ে কুমার চাহিয়া দেখিল
জনকের উপছায়া—
<তারকার মত জ্বলিছে নয়ন> {আগুনের মত আঁখি দু’টা জ্বলে}
শোণিতে মাখান কায়া।
কি কথা বলিতে চাহিল কুমার
ভয়ে হোল কথা রোধ—
জলদ-গভীর স্বরে কে কহিল
“প্রতিশোধ— প্রতিশোধ।”—
“হারে কুলাঙ্গার— কি কাজ করিলি
প্রতিজ্ঞা ভূলিলি নাকি?
কার দুহিতারে করিস্ বিবাহ
আজিকে জানিস্ তাকি?
ক্ষত্র ধর্ম্ম যদি প্রতিজ্ঞা পালন
হয়— কুলাঙ্গার— তবে
এ চরণ ছুঁয়ে যে আজ্ঞা লইলি
সে আজ্ঞা পালিতে হবে।
নহিলে যদিন রহিবি বাঁচিয়া
দহিবে এ মোর ক্রোধ।”
নীরব সে গৃহে ধ্বনিল আবার
“প্রতিশোধ— প্রতিশোধ”—

**৪৩

«+++» বসন হইতে কুমার
ছুরিকা লইল খুলি—
ধীরে প্রতাপের বুকের উপরে
সে ছুরি ধরিল তুলি—
<থর থর থর কাঁপিতেছে হাত>
অধীর হৃদয় পাগলের মত
থর থর কাঁপে পাণি—
কত বার ছুরি ধরিল সে বুকে
<আবার লইল> {কত বার নিল} টানি।
মাথার ভিতরে ঘুরিতে লাগিল
আঁধার হইল বোধ—
নীরব সে গৃহে ধ্বনিল আবার
“প্রতিশোধ— প্রতিশোধ”
ক্রমশঃ চেতন পাইল প্রতাপ
মালতী উঠিল জাগি
চারি দিকে চেয়ে বুঝিতে নারিল
এসব কিসের লাগি।
<তখন কুমার কহিলা গম্ভীরে
চাহিয়া প্রতাপের পানে—>
কুমার তখন কহিলা সুধীরে
চাহি প্রতাপের মুখে—
প্রতি কথা তার অনলের মত
লাগিল তাহার বুকে।—
“একদা গভীর বরষা নিশীথে
<ঘুমাতে জগৎ জন> {নাই জাগি জন প্রাণী—}
সহসা সভয়ে জাগিয়া উঠিনু
শুনিয়া কাতর বাণী—
চাহি চারিদিকে দেখিনু বিষ্ময়ে
পিতার হৃদয় হোতে—
শোণিত বহিছে— শয়ন তাঁহার
ভাসিছে শোণিত স্রোতে।
কহিলেন পিতা— “অধিক কি কব
আসিছে মরণ বেলা
এই শোণিতের প্রতিশোধ নিতে
করিস্‌নে অবহেলা।”
হৃদয় হইতে টানিয়া ছুরিকা
দিলেন আমার হাতে—
সে<ই> অবধি সেই বিষম ছুরিকা
রাখিয়াছি সাথে সাথে—
করিনু প্রতিজ্ঞা ছুঁইয়া কৃপান
“শুন ক্ষত্র কুল প্রভু—
এর প্রতিশোধ তুলিল— তুলিব
অন্যথা নহিবে কভু।”
কি তাহার নাম— জানিতাম নাকো
ভ্রমিনু সকল গ্রাম—
অধীরে প্রতাপ উঠিল কহিয়া
“প্রতাপ তাহার নাম।
এখনি— এখনি— ওই ছুরি তব—
বসাইয়া দেও বুকে—
যে জ্বালা হেথায় জ্বলিছে— কেমনে
∟কব তাহা এক মুখে।

নি«+++» জ্বালা— নি«+++»
দাও তার প্রতিফল—
মৃত্যু ছাড়া এই হৃদি-অনলের
নাই আর কোন জল!”
কাঁদিয়া উঠিল মালতী— কহিল
পিতার চরণ ধোরে—
“ওকথা— বোলো না— বোলো না গো পিতা
যেওনা ছাড়িয়ে মোরে!—
কুমার— কুমার— শুন মোর কথা
এক ভিক্ষা শুধু মাগি—
রাখ মোর কথা— ক্ষমহ পিতারে
দুখিনী আমার লাগি!
শোণিত নহিলে ও <+++> ছুরির তব
পিপাসা না মিটে যদি—
তবে এই বুকে দেহ গো বিঁধায়ে
এই পেতে দিনু হৃদি!”
আকাশের পানে চাহিয়া কুমার
কহিল কাতর স্বরে—
“ক্ষমা কর পিতা পারিব না আমি
কহিতেছি সকাতরে।—
অতি নিদারুণ অনুতাপ-শিখা
দহিছে যে হৃদি তল
সে হৃদয় মাঝে ছুরিকা বসায়ে
বলগো কি হবে ফল?
অনুতাপী জনে ক্ষমা কর পিতা
রাখ এই অনুরোধ”—
নীরব সে গৃহ ধ্বনিল আবার
“প্রতিশোধ— প্রতিশোধ—”
হৃদয়ের প্রতি শিরা উপশিরা
কাঁপিয়া উঠিল হেন—
সবলে ছুরিকা ধরিল কুমার
পাগলের মত যেন।
প্রতাপের সেই অবারিত বুকে
ছুরি বিঁধাইলা বলে—
মালতী বালিকা মূর্চ্ছিয়া পড়িল
কুমারের পদতলে।
উন্মত্ত হৃদয়ে জ্বলন্ত <নায়> নয়নে
বদ্ধ করি হস্ত মুঠি—
কুটীর হইতে পাগল কুমার
বাহিরেতে গেল ছুটি।
এখনো কুমার সেই বনমাঝে
<হেথায় হোথায়> {পাগল হইয়া ভ্রমে}
মালতী বালার চির মূর্চ্ছা আর
ভাঙ্গিল না এ জনমে

**৪৪

*শৈশব সঙ্গীত
*লীলা

«+++»ধিনু কাঁদিনু কতনা করিনু
ধন মান <সকল> যশ সকলি ধরিনু
চরণের তলে তার—
এত করি তবু পেলেমনা মন
ক্ষুদ্র এক বালিকার<!>{?}
{না যদি পেলেম} নাইবা পাইনু— <চাই না তাহারে>
চাই না ২ তা<হা>রে <আর>—
কি ছার সে বালা— তার তরে যদি
সহে তিল দুখ এ পুরুষ-হৃদি
তাহোলে পাষাণ ফেলিবে শোণিত
ফুলের কাঁটার ধারে—
এ কুমতি কেন হোয়েছিল বিধি
তারে সঁপিবারে গিয়েছিনু হৃদি—
এ নয়ন জল ফেলিতে হইল
তাহার চরণ-তলে?
বিষাদের শ্বাস ফেলিনু— মজিয়া
তাহার কুহক-বলে?
এত আঁখি জল— হইল বিফল?—
<শুনিলাম সে নাকি +++> {বালিকা হৃদয় করিব যে জয়}
<ক্ষুদ্র র> {নাই হেন মোর গুণ?}
হীন রণধীরে ভালবাসে বালা—
তার গলে দিবে পরিণয় মালা?
এ কি <নিদারুণ> লাজ নিদারুণ?
হেন অপমান নারিব সহিতে
ঈর্ষ্যার আগুন নারিব বহিতে—
ঈর্ষ্যা? কারে ঈর্ষ্যা? <+++> হীন রণধীরে—
ঈর্ষ্যার ভাজন সেও হোল কি রে?
ঈর্ষ্যা-যোগ্য সেকি মোর?—
তবে শুন আজি <নরকের +++> {শ্মশান-কালিকা}
শুন এ প্রতিজ্ঞা ঘোর!—
আজ হোতে মোর রণধীর অরি—
শত নৃকপাল<+++> তার রক্তে ভরি
করাবো তোমারে <প্রা>{পা}ন
এ বিবাহ কভু দিব না ঘটিতে
এ দেহে রহিতে প্রাণ!
তবে নমি তোমা শ্মশান কালিকা
শোণিত-লুলিতা— কপাল মালিকা—
কর এই বর দান
তাহারি শোণিতে মিটায় গো তৃষা
যেন <এ> মোর এ কৃপাণ!”
কহিতে কহিতে— বিজন নিশীথে
শুনিল বিজয়— সুদূর হইতে
শত শত অট্ট হাসি
একেবারে যেন উঠিল ধ্বনিয়া
শ্মশান-শান্তিরে নাশি
শত শত শিবা উঠিল কাঁদিয়া—
<শ্বসিয়া উঠিল শ্মশান বায়>
{কি জানি কিসের লাগি}
কুস্বপ্ন দেখিয়া শ্মশান যেনরে
কাঁদিয়া উঠিল জাগি!
শতেক আলেয়া উঠিল জ্বলিয়া
আঁধার হাসিল দশন মেলিয়া—
আবার যাইল মিশি—
<+++> সহসা থামিল অট্টহাসি ধ্বনি
শিবার <ক্রন্দন> {রোদন} থামিল অমনি
আবার ভীষণ সুগভীর তর
নীরব হইল নিশি—
দেবীর সন্তোষ বুঝিয়া বিজয়
নমিল চরণে তাঁর—
মুখ নিদারুণ— আঁখি রোষারুণ
হৃদয়ে জ্বলিছে রোষের আগুন
করে অসি খরধার।

গিরি অধিপতি রণধীর সাথে
লীলার বিবাহ হবে
হরষে রয়েছে আমোদে মাতিয়া
গিরি বাসী গণ সবে।
অস্তে গেল রবি— পশ্চিম শিখরে—
আইল গোধূলী কাল—
{ধীরে} ধরণীরে <ক্রমে> ফেলিল আবরি
ক্রমশ আঁধার জাল।
ওই আসিতেছে লীলার শিবিকা
নৃপতি-ভবন পানে
শত অনুচর চলিয়াছে সাথে
মাতিয়া হরষ গানে—
জ্বলিছে আলোক— বাজিছে বাজনা
ধ্বনিতেছে দশ দিশি—
ক্রমশঃ আঁধার হইল নিবীড়
গভীর হইল নিশি।
চলেছে শিবিকা গিরিপথ দিয়া
<+++> {সাবধানে অতিশয়}
বনমাঝ দিয়া গিয়াছে সে পথ
বড় সে সুগম নয়।
অনুচর গণ হরষে মাতিয়া
গাইছে হরষ গীত
সে হরষ ধ্বনি— জন কোলাহল
ধ্বনিতেছে চারি ভিত।

**৪৫

«+++»রগণ
«+++»ণি
«+++» সকলে উ«+++» করি
দস্যু দস্যু করি ধ্বনি।
শত বীর হৃদি উঠিল নাচিয়া
বাহিরিল শত অসি
শত ২ শর মিটাইল তৃষা
বীরের হৃদয়ে পশি!
আঁধার ক্রমশঃ নিবীড় হইল
বাধিল বিষম রণ
লীলার শিবিকা— কাড়িয়া লইয়া
পলাইল দস্যুগণ!
***
কারাগার মাঝে বসিয়া রমণী
বরষিছে আঁখি জল।
বাহির হইতে উঠিছে গগনে
সমরের কোলাহল!
“<মাতা> {হে মা} ভগবতী— শুন এ মিনতি—
রাখ গো মিনতি মোর
দুখিনীর আর কেহ নাই মাগো
তার’ এ বিপদে ঘোর!
যদি সতী হই, মনে ২ যদি
তাঁহারি চরণ সেবি—
পতি বোলে যাঁরে কোরেছি বরণ
বাঁচাও তাঁহারে দেবি!
মোর তরে দেবি এ শোণিতপাত!
আমি মা— অবোধ বালা
জনমিয়া আমি মরিনু না কেন
ঘুচিত সকল জ্বালা!
মোর তরে তিনি হারাবেন প্রান?
না— নামা রাখ এ কথা
ছেলেবেলা হোতে অনেক সহেছি
আর মা দিওনা ব্যথা!”
কহিতে ২ উঠিল আকাশে
দ্বিগুণ সমর-ধ্বনি
জয় ২ রব— আহতের স্বর
কৃপাণের ঝনঝনি!
«সাঁ»জের জলদে ডুবে গেল র«বি»—
আকাশে উঠিল তারা—
«+++»কেলা বসিয়া বালিকা সে লীলা
কাঁদিয়া হোতেছে সারা!
«+++»হসা খুলিল কারাগার দ্বার
বালিকা সভয় অতি!
নিদারুণ হাসি হাসিতে ২
পশিল বিজয় তথি!
অসি হোতে «+++»
শোণিতে মাখানো বাস
শোণিতে মাখানো মুখের মাঝারে
স্ফুরে নিদারুণ হাস!
অবাক বালিকা; বিজয় তখন
<ধীরে ধীরে কহে কথা—> {কহিল গভীর রবে}—
সমর বারতা শুনেছ কুমারী?
সেকথা শুনিবে তবে?”
“বুঝেছি— বুঝেছি— জেনেছি <সকলি> {২}
বলিতে হবেনা আর—
না না— বল— বল— শুনিব সকলি
যাহা আছে বলিবার<—>{!}
৲{এই} বাঁধিলাম৲ ৴পাষাণে হৃদয়৴ <তবে>
বল কি বলিতে আছে!
যত ভয়ানক হোক্ না সে কথা
লুকায়ো না মোর কাছে।”
“শুন তবে বলি” কহিল বিজয়
তুলি অসি খরধার
“এই অসি দিয়ে বধি রণধীরে
হরেছি ধরার ভার!”
“৲পামর—৲ ৴নিদয়—৴ পাষাণ পিশাচ”
মূরছি পড়িল <বালা> {লীলা}
<হাসিয়া> {অলীক বারতা কহিয়া} বিজয়— <খুলিয়া দুয়ার>
কারা হোতে বাহিরিলা।
সমরের ধ্বনি থামিল ক্রমশ
নিশা হোল সুগভীর
বিজয়ের সেনা পলাইল রণে—
জয়ী হল রণধীর!
***
কারাগার মাঝে পশি রণধীর
কহিল {অধীর} স্বরে—
“লীলা— রণধীর এসেছে তোমার
এস এ বুকের পরে!”
ভূমি তল হোতে চাহি দেখে লীলা
সহসা চমকি উঠি!
হরষ আলোকে জ্বলিতে লাগিল
লীলার নয়ন দুটি!
“এস নাথ <হেথা> এস <একবার> {অভাগীর পাশে}
বোস <অভাগীর পাশে> {একবার হেথা}—
জনমের <শোধ> {মত} দেখি ও মুখানি
শুনি ও মধুর কথা!
ডাক নাথ সেই আদরের নামে
ডাক মোরে স্নেহ ভরে—
এ অবশ মাথা তুলে লও সখা
তোমার বুকের পরে।”

**৪৬

«+++»ধানো
«+++»ণিত ধারা«+++»
রহে রণধীর পলক বিহীন
যেন পাগলের পারা।
রণধীর <+++> বুকে মুখ লুকাইয়া
গলে বাঁধি বাহুপাশ
কাঁদিয়া কাঁদিয়া কহিল বালিকা
“পূরিল না কোন আশ!
মরিবার সাধ ছিলনা আমার
কত ছিল সুখ আশা—
পারিনু না সখা করিবারে ভোগ
তোমার ও ভাল বাসা!—
হারে হা পামর কি করিলি তুই
নিদারুণ প্রতারণা—
এত দিনকার— সুখ সাধ মোর
পূরিল না— পূরিল না!”
এত বলি ধীরে অবশ বালিকা
কোলে তার মাথা রাখি
রণধীর মুখে রহিল চাহিয়া
মেলিইয়া অব<+++>{শ} আঁখি!
রণধীর ক্রমে শুনিল সকল
বিজয়ের প্রতারণা—
বীরের নয়নে উঠিল জ্বলিয়া
রোষের অনল-কণা!
“পৃথিবীর সুখ ফুরালো আমার
বাঁচিবার সাধ নাই!
এর প্রতিশোধ তুলিতে হইবে
বাঁচিয়া রহিব তাই!”
লীলার জীবন আইল ফুরায়ে
মুদিল নয়ন দুটি
কারাগার হোতে রণধীর তবে
বাহিরে আইল ছুটি।
দেখে {সেই} বিজয়ের মৃতদেহ
পড়িয়া রোয়েছে সমর ভূমে
রণধীর যবে মরিছে জ্বলিয়া
বিজয় ঘুমায় মরণ-ঘুমে!
<+++>{শত} ভাগে তার কাটিয়া শরীর
দলি তারে পদতলে
পাগলের মত পড়িল ঝাঁপায়ে
বিপাশা নদীর জলে!

**৪৭

*Moor-এর Irish Melodies-এর বাংলা অনুবাদ

**৪৮

*কবিতা
*অবসাদ

হে কবিতা— হে কল্পনা—
জাগাও— জাগাও দেবি উঠাও আমারে দীন হীন—
ঢাল এ হৃদয় মাঝে জ্বলন্ত-অনল ময় বল—
দিনে দিনে অবসাদে হইতেছি অবশ মলিন
নির্জীব এ হৃদয়ের দাঁড়াবার নাই যেন বল!
নিদাঘ তপন শুষ্ক ম্রিয়মান লতার মতন—
অবসন্ন {হোয়ে} যেন ভূমি পরে <পো>{প}ড়িছি লুটায়ে—
চারিদিকে চেয়ে দেখি ক্লান্ত আঁখি করি উন্মীলন—
বন্ধুহীন— প্রাণহীন— জনহীন— মরু— মরু— মরু—
আঁধার— আঁধার— সব— নাই জল— নাই তৃণ তরু—
নির্জীব হৃদয় মোর পড়িতেছে ভূমিতে লুটায়ে—
এস দেবি এস, মোরে— রাখ এ মূর্চ্ছার ঘোরে—
বলহীন হৃদয়েরে দাও দেবি দাও গো উঠায়ে!—
দাও দেবি সে ক্ষমতা— ওগো দেবি শিখাও সে মায়া—
যাহাতে জ্বলন্ত দগ্ধ নিরানন্দ মরু মাঝে থাকি—
হৃদয় উপরে«+++» পড়ে স্বরগের নন্দনের ছায়া—
বাহিরের রৌদ্র হোতে মাতৃস্নেহে আবরিয়া রাখি!
দাও দেবি সে ক্ষমতা, যাহে এই নীরব শ্মশানে
হৃদয়-প্রমোদ বনে বাজে সদা আনন্দের গীত!
মুমূর্ষু মনের ভার— পারিনা বহিতে আর—
হইতেছি অবসন্ন— বলহীন— চেতনা রহিত—
<উঠাও উঠাও মোরে— +++
দিনে দিনে হোয়ে যাব>
অজ্ঞাত পৃথিবী তলে— অকর্ম্মণ্য অনাথ অজ্ঞান
উঠাও— উঠাও মোরে করহ নূতন প্রাণ দান!
পৃথিবীর কর্মক্ষেত্রে যুঝিব— যুঝিব <+++ দেবি> {দিবারাত—}
কালের প্রস্তর পটে লিখিব অক্ষয় নিজ নাম—
অবশ নিদ্রায় <দেবি> {পড়ি} করিব না এ শরীর পাত—
মানুষ জন্মেছি যবে করিব কর্মেরি অনুষ্ঠান—
অগম্য উন্নতি-পথে পৃথ্বিতরে গঠিব সোপান!
তাই বলি দেবি—
সংসারের ভগ্নোদ্যম অবসন্ন {দুর্ব্বল} পথিকে<+++>
কর গো জীবন দান <+++> তোমার ও অমৃত-নিষেকে।।১।।

Ahmedabad
1878— July 6th আষাঢ় ২৩শে— শনিবার

**৪৯

*সাহিত্য
*পিত্রার্কা ও লরা / Laura & Petrarcha

প্রতি {উচ্চ} শাখাময় সরল কানন # প্রতি স্নিগ্ধ-ছায়া মোর ভ্রমণের স্থান—
শৈলে শৈলে তাঁর সেই পবিত্র আনন, # দেখিতে পায়গো মোর মানস নয়ান।—
সহসা ভাবনা হোতে <{যবে}> উঠি<লাম> {যবে} জাগি # প্রেমে মগ্ন মন মোর <বলিত <অমনি> {তখন}> {বলেগো আমায়}—
“কোথায় ভ্রমিছ ওগো ভ্রমিছ কি লাগি, # কোথা হোতে আসিয়াছ? এসেছ কোথায়?”
হৃদে মোর এই সব চঞ্চল স্বপন # ক্রমে ক্রমে স্থির-চিন্তা করে আনয়ন—
আপনারে একেবারে যাই<লাম> {যেন} ভূলি # <দহিল> {দহেগো} আমারে শুধু তারি চিন্তাগুলি—
মনে <হোত> {হয়} প্রিয়া যেন আসিয়াছে কাছে # সে ভূলে <নয়ন মোর উঠিত জা> {উজলি উঠে নয়ন আমার}
চারি দিকে লরা যেন দাঁড়াইয়া আছে # এ স্বপ্ন না ভাঙ্গে {যদি} কি চাহিগো আর?
দেখি যেন, (কে বা তাহা করিবে বিশ্বাস?) # বিমল সলিল কিম্বা হরিত কানন
অথবা তুষার-শুভ্র উষার আকাশ # তাঁহারি জীবন্ত ছবি করিছে বহন!
***
দুর্গম সংসারে যত করি গো ভ্রমণ # ঘোরতর মরু মাঝে যত দূর যাই
কল্পনা ততই তার মুরতি মোহন # দিশে দিশে আঁকে যেন দেখিবারে পাই—
অবশেষে <+++> আসে ধীরে সত্য সুকঠোর # ভাঙ্গি দেয় যৌবনের সুস্বপন মোর
***
<ওগো> {হারে} হত ভাগ্য বিহঙ্গম সঙ্গীহীন # সুখ-ঋতু অবসানে <গাহিতেছে> {গাইছিস} গীত
ফুরাইছে গ্রীষ্মকাল, ফুরাইছে দিন # আসিছে রজনী ঘোর, আসিতেছে শীত!
ওরে বিহঙ্গম তুই দুখ গান গাস # যদি জানিতিস্ কি যে দহিছে এ প্রাণ—
তা হোলে এ বুকে আসি করিতিস্ বাস # এর সাথে মিশাতিস্ বিষাদের গান!
কিন্তু হা— জানিনা তোর কিসের বিষাদ! # ৲কিন্তু মৃত্যু মোর সুখে সাধিয়াছে বাদ!৲
হয়ত সে বেঁচে আছে বিহঙ্গিনী প্রিয়া # ৴ভ্রমিস্ রে যার লাগি গাহিয়া গাহিয়া৴
সুখ, দুখ, চিন্তা, আশা যা কিছু অতীত # তাই নিয়ে আমি শুধু গাহিতেছি গীত!

<মলিন বিজন আমি> {সুকোমল ম্লানভাব} কপোলে তাহার # <শরত-মেঘের মত ঢাকিল সে হাসি> <{আসিয়া}> {ঢাকিল সে হাসি <তার>, ক্ষুদ্র মেঘ যথা—}
৲প্রেম৲ ৴হেন উথলিল৴ হৃদয়ে আমার # আঁখি কৈল প্রাণ পণ কহিবারে কথা!
তখন জানিনু আমি স্বরগ-আলয়ে # কি করিয়া কথা হয় আত্মায় আত্মায়
উজলি উঠিল তাঁর দয়া দিক-চয়ে # আমি ছাড়া আর কেহ দেখে নি গো তায়!
***
সবিষাদে অবনত নয়ন তাহার # নীরবে আমারে যেন কহিল সে এসে—
“কে<হ>গো হায় বিশ্বাসী এ বন্ধুরে আমার # ৲লইয়া৲ ৴যেতেছে৴ ডাকি এত দূর দেশে?”

±১ম stanza±

স্তব্ধ সন্ধ্যাকালে যবে পশ্চিম-আকাশে # {রবি} অ<স্ত>{স্তা}{চল}গামী <+++> পড়েছে ঢলিয়া—
বৃদ্ধ যাত্রী কোন এক অজ্ঞাত প্রবাসে # শ্রান্ত পদক্ষেপে একা যেতেছে চলিয়া
তবু যবে ফুরাইয়া যাবে শ্রম তার # তখন <বিজনে> {গভীর ঘুমে} মজিয়া <গভীর নিদ্রায়—> {বিজনে}
ভূলে যাবে দিবসের বিষাদের ভার # যত ক্লেশ সহিয়াছি সুদূর ভ্রমনে!
কিন্তু হায় প্রভাতের কিরণের সনে # যে জ্বালা জাগিয়া উঠে হৃদয়ে আমার
«র»বি যবে ঢলি পড়ে পশ্চিম গগনে # দ্বিগুণ বিধিয়া হৃদি করে ছারখার!

«+++»stanza±

প্রজ্বলন্ত রথচক্র নিম্ন পানে যবে # লোয়ে যান সূর্য্যদেব— অসহায় ভবে
«+++»খি রাত্রি কোলে, যার দীর্ঘীকৃত ছা«+++» গিরিশিখর সমুন্নত কায়া

**৫০

*৫০ক

*শৈশব সঙ্গীত
*ফুলবালা

±<আজি পূরণিমা নিশি
তারকা-কাননে বসি
অলস-নয়নে শশি
মৃদু হাসি হাসিছে
পাগল কবির মত
প্রাণের কবিতা যত
নিশীথের কানে কানে
সব যেন ভাষিছে!
সমীর অধীর
<মিলিয়া> {পশিছে} সে গান যত
<+++>{সু}খের স্বপন মত
<দিগন্ত +++ কান> <{ঘুম ঘোরে +++}>
ধীরে <+++> <+++> <{দিক্ বধু শ্রবণে}>
সমীর সভয় হিয়া
মৃদু ২ পা<+++>পিয়া
উকি মারি দেখে গিয়া
লতিকার ভবনে!
পূর্ব্বে আসে পাটিপিয়া!

±বিবর্ণ সায়াহ্ণ

পশ্চিমে আঁধার সন্ধ্যা আসে পাটিপিয়া±>±

**৫০

*সাহিত্য
*পিত্রার্কা ও লরা / Laura & Petrarcha

৲দেয় উপত্যকা পরে৲ ৴বিস্তারিত করি৴
{তখন} কৃষক <লাঙ্গল তার> {হল} লোয়ে স্কন্ধোপরি—
ধরি কোন গ্রাম্য-গীতি অশিক্ষিত-স্বরে
চিন্তা ঢালি দেয় তার বন্য-বায়ু পরে!
***
চিরকাল সুখে তারা করুক্ যাপন!
আমার আঁধার দিনে হর্ষের কিরণ
এক তিল <সে> আমারে {গো} দেয় নি আরাম
এক মুহূর্ত্তের তরে দেয়নি বিরাম—
যে গ্রহ উঠিয়া কেন উজলে বিমান
আমার যে দশা তাহা রহিল সমান!

দগ্ধ হোয়ে মর্ম্মভেদী মর্ম্ম-যন্ত্রণায়—
এ বিলাপ করিতেছি, দেখিতেছি হায়—
অতি ধীর পদক্ষেপে স্বাধীনতা সুখে
হল-যুগ-মুক্ত বৃষ ধায় গৃহ মুখে।
আমি কি হবনা মুক্ত এ বিষাদ হোতে?
বিরাম পাবেনা আঁখি অশ্রু-জল স্রোতে?
তার সেই মুখ পানে চাহিল যখন
কি খুঁজিতেছিল মোর নয়ন তখন?
এক দৃষ্টে <+++> চাহিলাম সে স্বর্গীয় মুখে
মুদ্রিত হইয়া গেল সৌন্দর্য্য এ বুকে
কিছুতে সে মুছিবে না, যতদিনে আসি
মৃত্যু এই জীর্ণ দেহ না ফেলে বিনাশি!

বিমল-বাহিনী ওগো তরুন-তটিনী
উজ্জল তরঙ্গে <+++> {তব}, ললনা আমার—
অনুরাগী এ মর্ম্মের একমাত্র দেবী—
তাঁহার সৌন্দর্য্য যত কোরেছেন দান—
শুনগো পাদপ তুমি— তব দেহ পরে—
ভর দিয়া দাঁড়াইয়া ছিলেন সে দেবী—
নত হোয়ে পোড়েছিল ফুলপত্র গুলি
বসনের তলে, বক্ষ সুবিমল তার
স্পর্শ কোরেছিলে তব মিষ্ট আলিঙ্গনে!
তুমি বায়ু সেইখানে বহিতেছ সদা
যে{ই}খানে প্রেম আসি <+++> দেখাইলা মোরে
প্রিয়ার নয়নে শোভে ভাণ্ডার তাঁহার!
<তোমরা> {শুন গো} তোমরা সবে আর এক বার
এই ভগ্ন-হৃদয়ের শেষ দুঃখগান!

অবশ্য ফলিবে যদি ভাগ্যের লিখন
অবশ্যই অবশেষে প্রেম যদি মোর
অশ্রুময় আঁখিরেই করে গো মুদিত,
{ভ্রমিবে যখন আত্মা স্বদেশ-আকাশে}
«+++» <+++> {দেখো গো} যেন<গো> <+++> এই প্রিয় স্থা«+++»
«+++» হয়গো নিহি«+++»

**৫১

মরণের কঠোরতা «+++» হ্রাস
যদি এই প্রিয় আশা, সেই ভয়ানক
অনন্তের পথ করে পুষ্প-বিকীরিত!
এই কাননের মত সুশীতল ছায়া
কোথা আছে পৃথিবীতে, শ্রান্ত-আত্মা যেথা
এক মুহূর্ত্তের তরে করিবে বিশ্রাম!
{নাইক} এ<হেন>{মন} <+++> স্তব্ধ <আর> হরিত কবর
<কোথাও নাইক {+++} যেইখানে মোর
পৃথিবীর দুখে শোকে পরিশ্রান্ত দেহ>
যেখানে আমার এই পরিশ্রান্ত দেহ
ঘুমাইবে পৃথিবীর দুখ শোক ভূলি!

বোধহয় একদিন সে মোর ললনা
স্বর্গীয় সুন্দরী সেই— নিষ্ঠুর<->দয়ালু—
এক দিন এই খানে আসিবে কি ভাবি—
যেইখানে একদিন মুগ্ধ-নেত্র মোর—
তাঁর সে উজ্জ্বল নেত্র দেখিত চাহিয়া—
হয়ত নয়ন তাঁর আপনা আপনি—
খুঁজিয়া খুঁজিয়া মোরে— চারি দিক পানে
আমার কবর সেই পাইবে দেখিতে!
হয়ত গলিবে তার লোমাঞ্চিত মন—
হয়ত একটি তার বিষাদ নিশ্বাস
জাগাইবে মোর পরে স্বর্গের করুণা!
***
এখনো সে মনে পড়ে— {যবে} পুষ্পবন <শাখা>
বসন্তের সমীরণে হইয়া বিনত
সুরভি-কুসুম-রাশি করিত বর্ষণ—
তখন রক্তিম-মেঘে হইয়া আবৃত
বসিতেন প্রকৃতির উপহার মাঝে—
কভু বা বসনে তার কভুবা কুন্তলে
প্রকৃতি কুসুম-গুচ্ছ দিত সাজাইয়া
চারিদিকে তাঁর কভু <সা> তটিনী সলিলে
কভুবা তৃণের পরে পড়িত ঝরিয়া
পুষ্প-বন হোতে কত পুষ্প রাশি রাশি—
চারিদিকে তরুলতা কহিত মর্ম্মরি
“প্রেম হেথা করিয়াছে সাম্রাজ্য বিস্তার!”

সেই পুরাতন বায়ু লাগিতেছে গায়ে, # সেই পুরাতন গিরি স্পষ্টিয়া বিমান
কি সৌন্দর্য্য <শ্রো> স্রোত ওরা পড়িছে ঝরিয়া # স্বর্গ দিতেছেন ঢালি কি আলোক রাশি—
চরণে হরিত তৃণ উঠে অঙ্কুরিয়া # শত বর্ণময় ফুল উঠিছে বিকাশি!
{হর্ষময় ভক্তিভরে সায়াহ্ণ-<+++>{বিমান}
সমুদয় দীপ তার <দিয়াছে জ্বালিয়া> {করেছে জ্বলিত}
প্রচারিতে দিশে ২ তার যশোগান
{পাইয়া} যাহার শোভা হোয়েছে শোভিত}

**৫২

*ভগ্নহৃদয়
*প্রথম সর্গ

«+++»মাকর মোরে সখি শুধায়োনা আর # মরমে<র> লুকানো থাক মরমের ভার!
«+++» গোপন-<শিখা>{কথা} সখি, সতত লুকায়ে রাখি # <মরমের মরমে যা জ্বলে> {দেবতা-কাহিনী সম পূজি} অনিবার
«+++»হা মানুষের কানে, ঢালিতে যে লাগে প্রাণে! # লুকানো থাক্ তা’ সখি হৃদয়ে আমার!
ভাল বাসি,— শুধায়ো না কারে ভাল বাসি! # সে নাম কেমনে সখি কহি{ব} প্রকাশি?
আমি <+++> তুচ্ছ হোতে তুচ্ছ, সে নাম যে অতি উচ্চ, # সে নাম যে নহে যোগ্য এই রসনার!
<+++> ক্ষুদ্র <ঐ> ওই কুসুমটি পৃথিবী কাননে, # আকাশের তারকারে পূজে মনে মনে
<পূজিতে ২ তারে> {দিন ২ পূজা করি} শুকায়ে <ঝরিয়া> পড়ে {সে ঝরি} # আজন্ম নীরব-প্রেমে যায় প্রাণ তার!—
তেমনি পূজিয়া তারে— এ প্রাণ যাইবে হারে # তবুও লুকানো রবে একথা আমার!

**৫২

*গীতবিতান
*প্রেম ১২১

<তারে সখা কত ভাল বাসি # সে কথা কেমনে আমি কহিব প্রকাশি?
আমার এ হৃদিমাঝে, যে প্রেমের গীত বাজে
কথা খুঁজে পাহিনা যে, বলিব কেমনে # যে বালার ছবি সখা আঁকিয়াছি মনে>
⋋তুমি যদি হও মোর⋋ ⋌তোমারেই করিয়াছি⋌ সংসারের ধ্রুব তারা # ⋋তাহোলে কখনো আর⋋ ⋌এ সমুদ্রে আর কভু⋌ হবনাক’ পথহারা।
যেথা আমি যাই নাকো, তুমি প্রকাশিত থাকো, # আকুল এ আঁখিপরে ঢাল গো আলোক-ধারা!
ও মুখানি সদা মনে, জাগিতেছে সঙ্গোপনে, # আঁধার হৃদয় মাঝে দেবীর প্রতিমা পারা—
কখনো কুপথে যদি— ভ্রমিতে চায় এ হৃদি # অমনি ও মুখ হেরি সরমে সে হয় সারা!

**৫২

*?

সখা, এতদিনে জুড়াল হৃদয় # পেয়েছি সে সুখ যাহা খুঁজেছি পৃথিবী ময়

**৫২

*ভগ্নহৃদয়
*ষষ্ঠ সর্গ

শুধু যদি বলি সখি ভালবাসি তারে # এ মনের কথা যেন ফুরায় যে না রে—
ভালবাসা ২ সবাইত কয় # ভালবাসা কথা যেন ছেলেখেলাময়—
প্রতি কাজে প্রতি পলে, সবাই যে কথা বলে # তাহে যেন মোর প্রেম প্রকাশ না হয়!
মনে হয় যেন সখা এত ভালবাসা; # কেহ ভাল বাসে নাই— কারো মনে আসে নাই
প্রকাশিতে নারে তাহা মানুষের ভাষা!

**৫২

*ভগ্নহৃদয়
*দশম সর্গ

কে তুমি গো খুলিয়াছ স্বর্গের দুয়ার?
ঢালিতেছ এত সুখ, ভেঙ্গে <যেন> {গেল গেল} বুক—
যেন এত সুখ হৃদে ধরে না কো আর!
তোমার সৌন্দর্য্যভারে— দুর্ব্বল-হৃদয় হা রে
অভিভূত হোয়ে যেন পোড়েছে আমার!
এস হৃদে এস দেবি— আজন্ম তোমারে সেবি
ঘুচাইব হৃদয়ের যন্ত্রণা আঁধার!
<দিব প্রেম>
তোমার চরণে দিব প্রেম উপহার
না যদি চাওগো দিতে প্রতিদান তার—
নাইবা দিলে তা বালা, থাক হৃদি করি আলা
হৃদয়ে থাকুক্ জেগে সৌন্দর্য্য তোমার!

**৫২

*ভগ্নহৃদয়
*পঞ্চম সর্গ

<বল সখা সেকি ভাল বাসে?
দারুণ সংশয় এই কে মোর বিনাশে?>
কে আমার সংশয় <বিনাশে> {মিটায়}?
কে বলিয়া দিবে, <মোর> ভাল <সে কি বাসে> {বাসে কি আমায়}!
{তার} প্রতি দৃষ্টি, হাসি <তার>, তুলিছে তরঙ্গ<ভরি>{রাশি}
এক মুহূর্ত্তের শান্তি কে দিবে গো হায়?
পারিনে ২ আর— বহিতে সংশয় ভার
চরণে ধরিয়া তার শুধাইবো গিয়া
হৃদয়ের এ <আঁধার +++> সংশয় দিই মিটাইয়া
কিন্তু এ সংশয় ভালো— পাছে গো সত্যের «+++»
ভাঙ্গে এ সাধের স্বপ্ন বড় ভয় গণি
পাছে এ আশার মাথে পড়ে গো অশনি

**৫৩

*শৈশব সঙ্গীত
*অপ্সরা-প্রেম

আসে সন্ধ্যা হোয়ে আঁধার আলয়ে # একেলা রোয়েছি বোসি—
শ্রম হোতে সবে আসিয়াছে ফিরে # জ্বলিল প্রদীপ কুটীরে ২—
শ্রান্ত মাথা রাখি বাতায়ন দ্বারে # নীরব প্রান্তরে চেয়ে আছি হারে
আকাশে<র> উঠিছে শশি।
কতদিন আর রহিব এমন # মরণ হইলে বাঁচিযে এখন—
অবশ হৃদয় দেহ দুরবল # শুকায়ে গিয়াছে নয়নের জল
যেতেছে দিবস নিশি—
কোথাগো

অদিতি ভবন হইতে যখন # আসিতেছিলাম অলকা পুরে—
মাথার উপরে সাঁঝের গগন # শরৎ-তটিনী বহিছে দূরে
সাঁঝের কনক বরণ সাগর # অলসভাবে সে ঘুমায়ে আছে
দেখিনু দারুণ বাধিয়াছে রণ # গৌরী শেখর গিরির কাছে
দেখিনু সহসা বীর একজন # সমর সাগরে গিরির মতন
পদতলে আসি <গরজে> {আঘাতে} লহরী # তবুও অটল <অতি> পারা
বিশাল ললাটে ভ্রূভঙ্গীটি নাই # শান্ত ভাব জাগে নয়নে সদাই
উরস বরমে বরষার মত # ঠেকিছে বাণের ধারা?
অশণি বর<শি>{ষী} ঝটিকার মেঘে # দেখেছি ত্রিদশ পতি
চারি দিকে সব ছুটিছে ভাঙ্গিছে # তিনি সে মহান্ অতি
এমন উদার শান্ত মুখ ভাব # দেখেনি তাঁহারো কভু
পৃথিবী বিনত যাঁহার অসিতে # স্বরগ যেজন পারেন শাসিতে
দুরবল এই <+++> নারী-হৃদয়ের # করিনু তাঁহারে প্রভু
দিলাম বিছায়ে দিব্য পাখা-ছায়া # মাথার উপরে তাঁর
মায়া দিয়া তাঁরে রাখিনু আবরি # নাশিতে বাণের ধার
প্রতি পদে পদে গেনু সাথে সাথে # দেখিনু সমর ঘোর
শোণিত হেরিয়া শিহরি উঠিতে # লাগিল হৃদয় মোর
থামিল সমর— জয়ী বীর মোর # উঠিলা তরণীপরে
বহিল মৃদুল পবন-তরণী # চলিল গরব ভরে
গেল কতদিন, পূর«+++» # উঠিল জলদ-রেখা
মৃদুল ঝলকি ক্ষীণ সুদামিনী # দূর হোতে দিল দেখা
{ক্রমশঃ জলদ} ছাইল আকাশ <মাঝে +++> # <রোষের অনলে> {অশনি সরোষে} জ্বলি
মাথার উপর দিয়া তরণীর # অভিশাপ গেল বলি!
৲নাবিকেরা সবে বিধাতারে তবে # ডাকিল কাতর স্বরে
তরণী হইতে কোলাহলধ্বনি # উঠিল আকাশ পরে৲
৴একটি লহরী উঠেনি সাগরে # একটু বহেনি বায়
তড়িত-চরণে অশণি কেবল # দিশে দিশে দিশে ধায়৴

**৫৪

সহসা ভ্রূকুটী উঠিল সাগর # পবন উঠিল জাগি
<দারুণ উল্লাসে নাচিল উ+++>
শতেক ঊরমি মাতিয়া উঠিল # সহসা কিসের লাগি।
উলটি পালটি খেলিতে লাগিল # লইয়া তরণী খানি
দারুণ উল্লাসে সফেন সাগর # অধীর হইল হেন
প্রলয় কালের মহেশের মত # নাচিতে লাগিল যেন।
তরণীর পরে একেলা অটল # দাঁড়ায়ে বীর আমার
শুনি ঝটিকার প্রল<য়>{য়ের} <সঙ্গীত> {গীত} # বাজিছে হৃদয় তাঁর
দেখিতে ২ ডুবিল তরণী # ডুবিল নাবিক যত—
<+++> যুঝি ২ বীর সাগরের সাথে # হইলেন জ্ঞান হত
আকাশ হইতে নামিনু তখন # ছুঁইনু সাগর <জল> জল
ঊরমিরা আসি খেলিতে লাগিল # চুমিয়া চরণ তল!
কেশপাশ লোয়ে খেলিল <সাগর> {পবন} # বারণ নাহিক মানে
ধীরে ২ তবে গাহিতে লাগিনু # পাগল-সাগর কানে।

কেন গো সাগর, এমন চপল # এমন অধীর প্রাণ?
শুন গো আমার গান # তবে শুনগো আমার গান?
<পূরণিমা নিশি আসিবে যখন <ধীরে> {ফিরে} # (আমি) মেঘের ঘোমটা সরায়ে দিবগো ধীরে—
আমি দিক্‌বালাদের পরাব তারার মালা # (তারা) সলিলে তোমার করিবে কতনা খেলা>
পূরণিমা নিশি আসিবে যখন # আসিবে যখন ফিরে—
(তার) মেঘের ঘোমটা সরায়ে দিবগো # সরায়ে দিবগো ধীরে
প্রতি হাসি তার পড়িবে তোমার # বিশাল হৃদয় পরে—
(সুখে) কতনা ঊরমি জাগিবে তখন # জাগিবে প্রণয় ভরে
তবে থাম গো সাগর থামগো # কেন হোয়েছ অধীর প্রাণ
প্রতি ঊরমিরে করিব তোমার # তারার খেলেনা দান?
দিক বালাদের বলিয়া দিব # আঁকিবে তাহারা বসি—
প্রতি ঊরমির মাথায় মাথায় # একটি একটি শশি!
(আমি) তটিনী-বালারে দিবগো শিখায়ে # না হবে তাহার আন—
তারা # গাহিবে প্রেমের গান
তারা # কানন হইতে আনি ফুলরাশি, করিবে তোমারে দান
তারা # হৃদয় হইতে শত প্রেমধারা করাবে তোমারে পান—
তবে থামগো সাগর থামগো # কেন হোয়েছ, অধীর প্রাণ
যদি ঊরমি শিশুরা নীরব নিশীথে # ঘুমাতে নাহিক চায়—
তবে জানিও সাগর, বোলে দিব আমি # আসিবে মৃদুল বায়—
কানন হইতে করিয়া তাহারা # ফুলের সুরভি পান
কানে কানে ধীরে গাহিয়া যাইবে # ঘুম পাড়াবার গান
দেখিতে ২ ঘুমায়ে পড়িবে # <তাহারা> তোমার <বুকে> বিশাল বুকে—
প্রতি ঊরমিয়া দেখিবে তখন # চাঁদের স্বপন সুখে

**৫৫

*সন্ধ্যাসংগীত
*দুই দিন

ফুরালো দুদিন
কেহ নাহি জানে এই দুইটি দিবসে—
কি বিপ্লব বাধিয়াছে একটি হৃদয়ে।
দুইটি দিবস
চিরজীবনের স্রোত দিয়াছে ফিরায়ে—
এই দুই দিবসের পদ চিহ্ণ গুলি
শত বরষের শিরে রহিবে অঙ্কিত।
<যত অশ্রু> বরষেছি এই দুই দিন
<যত হাসি> হাসিয়াছি এই দুই দিন
এই দুই দিবসের হাসি অশ্রু মিলি
হৃদয়ে স্থাপিবে চির <হাসি অশ্রু।> {বসন্ত বরষা}

এই যে ফিরানু মুখ— চলিনু পূরবে
আর কি গো এ জীবনে ফিরে আসা হবে?
কত মুখ দেখিয়াছি— দেখিব না আর—
ঘটনা ঘটিবে শত— বরষ ২ কত
জীবনের পর দিয়া হোয়ে যাবে পার—
হয়ত গো একদিন অতি দূর দেশে
আসিয়াছে সন্ধ্যা হোয়ে, বাতাস যেতেছে বোয়ে
একেলা নদীর তীরে রহিয়াছি বোসে—
হুহু কোরে উঠিবেক সহসা এ হিয়া—
<মেঘাচ্ছন্ন> সহসা এ মেঘাচ্ছন্ন স্মৃতি উজলিয়া
<শতমেঘ স্তর ভেদি সূর্য্য কর রেখা
ঈষৎ আভাস মাত্র যায় যথা দেখা>
একটি অস্ফুট রেখা, সহসা দিবেক দেখা
একটি মুখের ছবি উঠিবে জাগিয়া—
একটি গানের ছত্র পড়িবেক মনে
দুয়েকটি সুর তার উদিবে স্মরণে!
অবশেষে একেবারে সহসা সবলে
বিস্মৃতির বাঁধগুলি ভাঙ্গিয়া চূর্ণিয়া ফেলি
সেদিনের কথাগুলি বন্যার মতন
একেবারে বিপ্লাবিয়া ফেলিবে এমন!

পাষাণ মানব মনে সহিবে সকলি
ভূলিব— যতই যাবে বর্ষ বর্ষ চলি—
কিন্তু আহা দুদিনের তরে হেথা এনু
একটি কোমল হৃদি ভেঙ্গে রেখে গেনু!
তার সেই মুখখানি— কাঁদো কাঁদো মুখ
এলানো কুন্তল জাল ছড়ায়েছে বুক
বাষ্পময় আঁখি দুটি অনিমিষ আছে ফুটি
আমারি মুখের পানে অঞ্চল লুটিছে
থেকে ২ উচ্ছ্বসিয়া কাঁদিয়া উঠিছে
সেই সে মুখানি আহা করুণ মুখানি
<কোমল> সুকুমার কুসুমটি <আজকের +++> {জীবন আমার}
বুক চিরে হৃদয়ের হৃদয় <+++> {মাঝার}
শতবর্ষ রাখি যদি দিবস রজনী
মেটেনা ২ তবু তিয়াষ আমার
শত ফুলদলে গড়া সেই মুখ তার
স্বপনেতে প্রতি নিশি— হৃদয়ে উদিবে আসি
এলানো আকুল পা<শ>{শে} আকুল নয়<ন>{নে}!
সেই মুখ সঙ্গী মোর হইবে বিজনে
নিশীথের অন্ধকার আকাশের পটে
নক্ষত্র তারার মাঝে উঠিবেক ফুটে
ধীরে ধীরে রেখা ২ সেই মুখ তার—
নিঃশব্দে মুখের পানে চাহিয়া আমার
চমকি উঠিব জাগি শুনি ঘুমঘোরে
“গেলে সখা? গেলে?” সেই ভাঙ্গা ২ স্বরে!
<সাহারার অগ্নিতপ্ত বায়ূচ্ছ্বাস মত
কুসুম-বনের পরে এক মুহূর্ত্তের তরে
বহিয়া গেলাম চলে>
সাহারার অগ্নিশ্বাস একটি পবনোচ্ছ্বাস
স্নিগ্ধচ্ছায়া সুকুমার ফুল বন পরে
বহিয়া গেলাম চলি মুহূর্ত্তের তরে
কোমলা যূঁথীর এক পাপড়ি খসিল
ম্রিয়মান বৃন্ত তার নোয়ায়ে পড়িল

ফুরালো দুদিন
শরতে যে শাখা ⋋হোতে ঝোরেছে পল্লব⋋ ⋌হোয়েছিল পত্রহীন⋌
এদুদিনে সে শা<খে>{খা} উঠেনি <+++>{মুকু}লিয়া
অ«+++» যে তুষার ছিল পড়ি
«+++» যায় নি গলিয়া

**৫৬

কিন্তু এ দুদিন মাঝে একটি পরাণে
কি বিপ্লব বাধিয়াছে কেহ নাহি জানে
ক্ষুদ্র এ দুদিন তার শত বাহু দিয়া
চিরটি জীবন মোর রহিবে বেষ্টিয়া!
দুদিনের পদচিহ্ণ চিরকাল তরে
অঙ্কিত রহিবে শত বরষের শিরে

±আজ সে <কোন> হৃদয় আমার কোথায় হারিয়েছি±

**৫৬

*ভগ্নহৃদয়
*নবম সর্গ

কি হোল আমার? বুঝিবা স্বজনি
হৃদয় হারিয়েছি—
প্রভাত কিরণে সকাল বেলাতে
মন লোয়ে সখি গেছিনু খেলাতে
মন কুড়াইতে মন ছড়াইতে
মনের মাঝারে খেলি বেড়াইতে
মন ফুল দলি চলি বেড়াইতে
সহসা স্বজনি, চেতনা পাইয়া
সহসা স্বজনি দেখিনু চাহিয়া
রাশি রাশি ভাঙ্গা হৃদয় মাঝারে
হৃদয় হারিয়েছি!
পথের মাঝেতে খেলাতে খেলাতে
হৃদয় হারিয়েছি
যদি কেহ সখি দলিয়া যায়?
তার পর দিয়া চলিয়া যায়?
আমার কুসুম-কোমল হৃদয়
কখনো সহেনি রবির কর
আমার মনের কামিনী পাপড়ি
সহে নি ভ্রমর চরণ-ভর—
চির দিন সখি হাসিত খেলিত
জোছনা আলোয় নয়ন মেলিত
হাসি «+++» অধর ভরিয়া
«+++»সিঁদুর পরিয়া
{শুকায়ে পড়িবে ছিঁড়িয়া পড়িবে
দল গুলি তার ঝরিয়া পড়িবে
যদি কেহ সখি দলিয়া যায়?}

**৫৭

ভ্রমরে ডাকিত হাসিতে হাসিতে
কাছে এলে তারে দিতনা বসিতে
সহসা আজ সে হৃদয় আমার
কোথায় হারিয়েছি!
এখনো যদিগো খুঁজিয়া পাই
এখনো তাহারে কুড়ায়ে আনি
এখনো তাহারে দলে নাই কেহ
আমার সাধের কুসুম খানি
এখনো স্বজনি একটি পাপড়ি
ঝরেনি তাহার জানিলো জানি
শুধু হারায়েছে খুঁজিয়া পাইলে
এখনো তাহারে কুড়ায়ে আনি—
ত্বরা কর্ তবে ত্বরা কর্ সখি—
হৃদয় খুঁজিতে যাই
শুকাবার আগে ছিঁড়িবার আগে
হৃদয় আমার চাই!

**৫৭

*ভগ্নহৃদয়
*দ্বাদশ সর্গ

এস মন! এস, তোমাতে আমাতে
মিটাই বিবাদ যত—
আপনার হোয়ে কেন মোরা দোঁহে
রহি গো পরের মত!
আমি যাই এক দিকে মন মোর!
তুমি যাও আর দিকে
যার কাছ হোতে ফিরাছ নয়ন
তুমি চাও তার দিকে!
তার চেয়ে এস দুজনে মিলিয়ে
হাত ধোরে যাই এক পথ দিয়ে—
আমারে ছাড়িয়ে অন্য কোন খানে
«+++»

**৫৮

পারি না কি মোরা দুজনে থাকিতে?
দোঁহে হেসে খেলে কাল কাটাইতে?
তবে ৲কেন৲ ৴তুই৴ না শুনে বারণ
যাস্‌রে পরের দ্বার?
তুমি আমি মোরা থাকিতে দুজন
বল্ দেখি হৃদি কিবা প্রয়োজন
অন্য সহচরে আর?
<কেন বল দেখি তুই সবি কোরে>
এত কেন সাধ বল দেখি মন
পর ঘরে যেতে যখন তখন—
সেথা কি রে তুই আদর পাস্?
বল্‌ত কতনা সহিস্ যাতনা—
দিবা নিশি কত সহিস্ লাঞ্ছনা
তবু কি রে তোর মেটেনি আশ?
আয় ফিরে আয়! মন! ফিরে আয়—
দোঁহে এক সাথে করিব বাস!
অনাদর আর হবে না সহিতে
দিবস রজনী পাষাণ বহিতে
মরমে দহিতে মুখে না কহিতে
ফেলিতে দুখের শ্বাস!
শুনিলিনে কথা— আসিলিনে হেথা
ফিরিলিনে একবার?
সখি দুরন্ত হৃদয়ের সাথে
পেয়ে উঠিনেত আর!
“নয়রে সুখের খেলা ভালবাসা”
কত বুঝালেম তায়—
হেরিয়া চিকন সোনার শিকল
খেলাইতে যায় হৃদয় পাগল
খেলাতে ২ না জেনে না শুনে
«+++»

**৫৯

বাহিরিতে চায় বাহিরিতে নারে
করে শেষে হায় হায়!
শিকল ছিঁড়িয়া এসেছে ক’বার
আবার কেনরে যায়?
চরণে শিকল বাঁধিয়া কাঁদিতে
না জানি কি সুখ পায়?
তিলেক রহেনা আমার কাছেতে
যতই কাঁদিয়া মরি
এমন দুরন্ত হৃদয় লইয়া
স্বজনি বল্ কি করি?

**৫৯

*ভগ্নহৃদয়
*চতুস্ত্রিংশ / *শেষ সর্গ

বায়ু! বায়ু! কি দেখিতে আসিয়াছ হেথা?
কৌতুকে আকুল!
আমি এক্‌টি জুঁই ফুল!
সারা রাত এ মাথায় পোড়েছে শিশির
গনেছি কেবল—
প্রভাতে বড়ই শ্রান্ত, ক্লান্ত, হে সমীর!
<হারায়েছি> অতি হীন-বল!
ভাঙ্গা বৃন্তে ভর করি রোয়েছি জীবন ধরি
জীবনে উদাস—
ওগো <সন্ধ্যার> {উষার} বাতাস!
শ্রান্ত মাথা পড়ে নুয়ে চাহিয়া রয়েছে ভুঁয়ে
মর’ মর’ একটি জুঁই ফুল!
ছুঁইয়ো না ২ এরে— এখনি পড়িবে ঝোরে
সুকুমার এক্‌টি জুঁই ফুল—
ও ফুল গোলাপ নয়— সুষমা সুরভি ময়
নহে চাঁপা নহেগো বকুল
ও নহেগো মৃণালিনী— তপনের আদরিণী
ও শুধু এক<টু>{টি} জুঁই ফুল!

**৬০

ওরে আসিয়াছ দিতে কি সংবাদ হায়?
হে প্রভাত বায়—?
প্রভাতে নলিনী আজি হাসিছে সরসে?
হাসুক্ সরসে!
শিশিরে গোলাপ গুলি কাঁদিছে হরষে?
কাঁদুক্ হরষে!
ও এখনি বৃন্ত হোতে কঠিন মাটিতে
পড়িবে ঝরিয়া
শান্তিতে মরেগো যেন মরিবার কালে
যাও গো সরিয়া!
ওরে কি শুধাতে আছে প্রেমের বারতা<?>{—}
মর’ মর’ যবে?
এক্‌টি কহেনি কথা অনেক সহেছে—
মরমে ২ কীট অনেক বহেছে
আজ মরিবার কালে শুধাইছ কেন?
কথা নাহি কবে!
ও যখন মাটি পরে পড়িবে ঝরিয়া
ওরে লোয়ে খেলাস্‌নে তুই।
উড়ায়ে যাস্ নে লোয়ে হেথা {হোতে} হেথা
ক্ষুদ্র এক যুঁই
যেখানে খসিয়া পড়ে, সেথা যেন থাকে পোড়ে
ঢেকে দিস্ শুকানো পাতায়!
ক্ষুদ্র জুঁই ছিল কি না কেহইত জানিত না
মরিলেও জানিবে না তায়!
কাননে হাসিত চাঁপা হাসিত গোলাপ
আমি যবে মরিতাম কাঁদি
আজো হাসিবেক তারা শাখায় ২
ভুজে ভুজ বাঁধি
সে অজস্র হাসি মাঝে সে হরষ <হাসি> {রাশি} মাঝে
ক্ষুদ্র এই বিষাদের হইবে সমাধি!

**৬১

মুখ খানি ধীরে ধীরে দেখিতেছ তুলে
<+++ প্রভাত +++> দাঁড়াইয়া কাছে
দেখিবারে— ক্ষুদ্র জুঁই মুখ নত করি
অভিমান কোরে বুঝি আছে
নয় ২ তাহা নয় সে সকল খেলা নয়
ফুরায় জীবন,
তবে যাও চলে যাও— আর কোন ফুলে যাও
প্রভাত পবন!

**৬২

*দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা

**৬৩

*রুদ্রচণ্ড
*তৃতীয় দৃশ্য

বসন্ত প্রভাতে এক মালতীর ফুল
প্রথম মেলিল আঁখি তার,
চাহিয়া দেখিল চারি ধার;
<ক্ষুদ্র মালতীর চোখে>
সৌন্দর্য্যের বিন্দু সেই মালতীর চোখে
সহসা জগত প্রকাশিল,
প্রভাত সহসা বিভাসিল
বসন্ত লাবণ্যে সাজি গো,
এ কি হর্ষ— হর্ষ আজি গো!
ঊষারাণী দাঁড়াইয়া শিয়রে তাহার
দেখিছে ফুলের ঘুম-ভাঙা,
হরষে কপোল তাঁর রাঙা!
কুসুম-<ভা>{ভ}গিনী গণ চারি দিক হ’তে
আগ্রহে র’য়েছে তারা চেয়ে,
কখন ফুটিবে চোক ছোট বোনটির
জাগিবে সে কাননের মেয়ে!
আকাশ সুনীল আজি কিবা!
অরুণ-নয়নে হাস্য-বিভা!
বিমল শিশির-ধৌত তনু
হাসিছে কুসুম-রাজি গো
এ কি হর্ষ— হর্ষ আজি গো!
মধুকর <{ধীরে ধীরে}> গান গেয়ে বলে
“মধু কই, মধু দাও দাও!”
হরষে হৃদয় ফেটে গিয়ে
ফুল বলে <“মন ল’য়ে যাও!”> {“এই লও লও”}

**৬৪

বায়ু আসি কহে <কহে> কানে ২
“ফুল বালা, পরিমল দাও”
আনন্দে কাঁদিয়া কহে ফুল
“যাহা আছে সব ল’য়ে যাও!”
<একি হর্ষ— হর্ষ আজি তা’র!>
<আনন্দ> {হরষ} ধরে না তা’র চিতে
আপনারে চায় বিলাইতে
বালিকা আনন্দে কুটি কুটি
পাতায় পাতায় পড়ে লুটি!
নূতন জগৎ দেখি রে
আজিকে হরষ এ কি রে!

**৬৪

*রুদ্রচণ্ড
*তৃতীয় দৃশ্য

তরু তলে ছিন্ন বৃন্ত মালতীর ফুল,
<+++> মুদিয়া আসিছে <+++> আঁখি তার
চাহিয়া দেখিল চারি ধার!
শুষ্ক তৃণ রাশি মাঝে একেলা পড়িয়া
চারিদিকে কেহ নাই আর।
{নিরদয় অসীম সংসার!}
কে আছে গো দিবে তার তৃষিত অধরে
এক বিন্দু শিশিরের কণা?
কেহ না, কেহ না!
মধুকর কাছে এসে বলে,
“মধু কই, মধু চাই চাই!”
<মালতী> সবিষাদ নিঃশ্বাস ফেলিয়া
ফুল বলে “কিছু নাই নাই!”
{কথাটি না ক’য়ে ধীরে ধীরে
মধুকর গেল অন্য ঠাঁই।}

**৬৫

“ফুলবালা পরিমল দাও”
বায়ু আসি কহিতেছে কাছে
মলিন বদন ফিরাইয়া
ফুল বলে “আর কিবা আছে?”
কথাটি না ক’য়ে সমীরণ
চ’লে গেল দূর দূর বন!
মধ্যাহ্ণ-কিরণ চারিদিকে
খর-দৃষ্টে চেয়ে অনিমিখে!
ফুলটির মৃদু-প্রাণ হায়
ধীরে ধীরে শুকাইয়া যায়!

**৬৬

*গীতবিতান
*প্রেম ৩৭৬

<+++>
দেখি দেখি মুখানি
দেখি
<কৈরে> দেখি দেখি
<+++> {মানিনীলো}
{দেখি} দেখি <+++> {+++ হাসি} মুখানি তোলো

<সখি> {বল} বল দেখি লো,
নিরদয় লাজ তোর টুটিবেকি লো?
চেয়ে আছি ললনা,
মুখানি তুলিবি কিলো?
ঘোমটা খুলিবি কিলো?
আধফুটো অধরে
হাসি <কি> ফুটিবে কিলো!
<তৃষিত নয়নে চেয়ে আছি ললনা,>
তৃষিত মনের আশা পূরাবি কিলো,
তবে, ঘোমটা খোল’, মুখটি তোল’,
আঁখি মেল লো!
<এত ক’রে <শুধা> তোরে সাধিলাম,
তবুওকি একটি কথাও তবু কহিতে কি নাই?
কমল নয়ন দুটি <নত কেনলো> ফুটে ফুটেনা,
পূর্ণিমা জোছনা সম <মধু> {ওই} মুখানি
সরমের মেঘ মালা {+++} ছুটিবে কি লো?>

**৬৭

সরমের মেঘে ঢাকা বিধু-মুখানি,
<মধুর জোছনা ফুটে উঠিবে কিলো>
মেঘ টুটে জ্যোৎস্না ফুটে উঠিবে কিলো

বেলওয়ার

**৬৮-৬৯

*সারস্বত সমাজের প্রথম অধিবেশনের প্রতিবেদন

**৭০

*গীতবিতান
*প্রেম ও প্রকৃতি ১৭

«+++»ল ২ নিয়ে গেল— এ প্রণয় স্রোতে—
যাবনা ২ করি— ভাসায়ে দিলাম তরী—
<ফিরিতে না পাই পথ> {উপায় নাইক আর} এ তরঙ্গ হোতে!
দাঁড়াতে পাইনে স্থান— ফিরিতে না পারে প্রাণ—
বায়ুবেগে চলিয়াছি সাগরের পথে!
জানিনু না শুনিনু না কিছুনা ভাবিনু—
অন্ধ হোয়ে একেবারে তাহে ঝাঁপ দিনু—
এত দূরে ভেসে এসে— ভ্রম গো বুঝেছি শেষে
এখন ফিরিতে কেন হয় গো বাসনা?
আগে ভাগে অভাগিনী কেন ভাবিলিনা?
এখন যে দিকে চাই, কূলের উদ্দেশ নাই—
সম্মুখে আসিছে রাত্রি— আঁধার করিছে ঘোর—
স্রোত-প্রতিকূলে যেতে— বল যে নাই এ চিতে—
শ্রান্ত ক্লান্ত অবসন্ন হোয়েছে হৃদয় মোর!—

**৭০

*?

হায় বিধি এক পালে এই কি আছিল শেষে?
ভালবাসা পাইনুনা মানুষেরে ভালবেসে?
কোথা ভেবেছিনু মনে— <মোর> এক সাথে দুই জনে
দিন রাত্রি গাব শুধু প্রণয়ের <গীত> {সুখগান}
ভূলিব স্বর্গের মায়া— নন্দন-কানন-ছায়া—
প্রেমে ২ স্তরে ২ ডুবায়ে রাখিব প্রাণ!—
আর কেহ দেখিবে না— আর কেহ জানিবে না
আর কিছু জানিব না কিছু শুনিবনা আন
প্রেম ২ প্রেম শুধু— দিবারাত্রি প্রেম শুধু
প্রেম হবে আমাদের মনের আহার পান!
সায়াহ্ণ আসিবে ধীরে— যাব’ দোঁহে সিন্ধু তীরে
রজত-বালুকা পরে বসিব গো গলে ২
সখার বিশাল-বুকে— মুখটি রাখিব সুখে
ভাঙ্গিয়া পড়িবে ঊর্ম্মি সুধীবে চরণ তলে!
<জলদের পটে লেখা সায়াহ্ণ কিরণ-রেখা>
সন্ধ্যার আঁধার ছায়ে বিজন প্রেমিক দুটি
কহিবে মরম কথা শরমের বাঁধ টুটি—

**৭১

*বউ-ঠাকুরানীর হাট
*উপহার
*শ্রীমতী সৌদামিনী দেবী শ্রীচরণেষু

কাছে থাকি, দূরে থাকি, # দেখ<,> আর নাই দেখ
শুধু স্নেহ দাও!
স্নেহ ক’রে ভাল থাক’, # স্নেহ দিতে ভালবাস’
কিছু নাহি চাও!
<দূর হ’তে <স্নেহ কর,> {ভাল বাস,}> {দূরে থেকে কাছে থাক’,} # <কি কোরে> {আপনি} হৃদয় <মোর> {তাহা}
জানিবারে পায়!
সুদূর প্রবাস হ’তে # স্নেহের বাতাস এসে
লাগে যেন গায়!
এত আছে, এত দাও, # কথাটি নাহিক কও,
— স্নেহ-পারাবার,—
প্রভাত শিশির সম # নীরবে ঝরিছে <স্নে> সুধা
<+++> প্রাণের মাঝার!
তব স্নেহ প্রাণে মম # নীরবে ভাসিয়া আসে
সৌরভের প্রায়,
<প্রভাত> উষার কিরণ সম # নীরবে <স্নেহের> {বিমল} হাসি
প্রাণেরে জাগায়!

**৭২

*গীতবিতান
*পূজা ও প্রার্থনা ৭

«কি» করিলি আশার ছলনে!
গৃহ তেয়াগিয়া # প্রবাসে ভ্রমিলি,
পথ হারাইলি গহনে!
<(ওরে)> {ঐ} <দিবস> {সময়} ৲চ’লে৲ ৴গেল৴ # <সন্ধ্যা> {আঁধার} হয়ে এল,
মেঘ ছাইল গগনে,
শ্রান্ত দেহ আর # চলিতে চাহে না
বিঁধিছে কণ্টক চরণে!
গৃহে ফিরে যেতে # প্রাণ কাঁদিছে,
এখন ফিরিব কেমনে,
পথ <দেহ ব’লে> {বলে দাও}, # পথ <দেহ> ব’লে {দাও}
কে জানে কারে ডাকি সঘনে!
বন্ধু যাহারা ছিল, # সকলে চলে গেল,
কে আর রহিল বিজনে,
(ওরে) জগত-সখা আছে # যা’ রে তাঁর কাছে,
বেলা যে যায় মিছে রোদনে!
<গৃহ দুয়া>
দাঁড়ায়ে গৃহদ্বারে # জন<নি>{নী} <জ> ডাকিছে,
আয়রে ধরি তাঁর চরণে
পথের ধূলি লেগে # অন্ধ আঁখি তোর
মায়েরে দেখেও দেখিলিনে!
কোথাগো কোথা তুমি, # জননি, কোথা তুমি,
ডাকিছ কোথা হতে এজনে,
হাতে ধরিয়ে # সাথে লয়ে চল
তোমার অমৃত ভবনে।

_end_

 

MANUSCRIPT SECTION

KeyFunction
HomeView first page
EndView last page
BackspaceView previous page
EnterView next page
Up ArrowScroll upward
Down ArrowScroll downward
Left ArrowScroll left
Right ArrowScroll right
+Zoom in
-Zoom out

TRANSCRIPTION SECTION

KeyFunction
Pg Upmove to top of page
Pg Dnmove to bottom of page
Ctl+increase font size of text
Ctl-decrease font size of text
Space Barhide/show (toggle) transcription panel

SIGNS USED IN MANUSCRIPT TRANSCRIPTION

SignNote/Explanation
<text>deleted text
{text}inserted text
+++illegible text
±text±text whose position is uncertain
৲text3৲ text2 text2 text2 text 2 text2 ৴text1৴text which has been transposed
[\text\]underlined text
⋋text of version1⋋ ⋌text of version2⋌two juxtaposed versions of the same text
≮text≯stet: retention of text earlier marked for deletion
[~  ] OR [~]If a note, comment, instruction etc. is placed in the margin, this marginalia is placed within square brackets [~  ]. The part of the main text against which it is located in the manuscript is indicated by the sign [~] at the beginning and end of that part.
<⋏⋏> OR {⋏text⋏} OR <⋎⋎> OR {⋎text⋎}Where the original author/scribe has changed the position of a small amount of text (a sentence or less) using an arrow, line or asterisk
  1. If a section is moved upward, this sign is placed at the original point (without the text)
    <⋏⋏>
  2. This sign is placed at the destination point, enclosing the text
    {⋏text⋏}
  3. If a section is moved downward, this sign is placed at the original point (without the text)
    <⋎⋎>
    This sign is placed at the destination point, enclosing the text
    {⋎text⋎}
  4. If there are multiple cases of migration in a page, they have been numbered as <⋏1⋏>, <⋏2⋏>, <⋏3⋏> according to their sequence in the page.
ORIf the position of a large amount of text has been changed, the following sign is placed at the destination point if the text has moved upward: ⋀ and the following if it has moved downward: ⋁
In these cases, no sign is placed at the original location.
A sign like ∟or a long vertical stroke in the original manuscript to indicate a line break or paragraph break has been recognized by moving the following section of the text to the next paragraph. The sign ∟ appears in the transcription at the start of this new paragraph.